‘৫ হাজার টাকা জরিমানা কিছুই না, এক জোয়ারের টাকা মাত্র’
‘৫ হাজার টাকা জরিমানা কিছুই না, এক জোয়ারের টাকা মাত্র।’ এইভাবে বলাবলি করেছে সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরার ঘাটঘর এলাকার জেলেরা। শুক্রবার নৌ পুলিশ পাঁচ জেলেকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করে।
জানা যায়, ইলিশের অবাধ বিচরণ ও ডিম ছাড়ার সময় গত ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশের সাগরে জাল ফেলে মাছ ধরা সরকারিভাবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য অধিদপ্তর। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সরকারি নিষিদ্ধ সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জোরালো তদারকি না থাকায় জেলেরা আনন্দ উৎসবের মাধ্যমে উৎসবমুখর পরিবেশে সাগর তীরবর্তী এলাকা থেকে গভীর সাগরে বোটে করে মাছ ধরে এনে বিক্রয় ও বিপণন করছেন, যা অনেক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর মতো।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর ইলিশের প্রজনন মৌসুমে জেলেদের জালে সাগরে সকল প্রকার মাছ ধরা সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ থাকলেও আইন মানেন না জেলেরা। প্রতিদিন সকাল-বিকাল ঘাটে মাছ নিয়ে আসছে সাগর থেকে জেলেরা। সন্ধ্যা তখন ৬টা, কুমিরা ঘাটের জেটির পশ্চিম পাশে মৎস্য অধিদপ্তরের অভিযানে কোস্ট গার্ড এবং নৌ-পুলিশের সহায়তায় অবৈধভাবে মাছ শিকারের অভিযান চলছে। কিন্তু ঘাটের দক্ষিণ পাশে তখন সাগরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে প্রায় ৪০/৫০ টি লাল বোট। অন্ধকারের মধ্যে একে একে বোটে উঠছে জেলেরা। তারা রাত এগোরোটা থেকে বারোটার মধ্যে মাছ নিয়ে তীরে ফিরবে। এমন দৃশ্য দেখা গেলো সীতাকুণ্ড উপজেলার সন্দ্বীপ-কুমিরা ঘাট এলাকায়। ২২ দিন জাটকা আহরণ, বিপণন, পরিবহন ও মজুত নিষিদ্ধ হলেও তা একেবারেই উপেক্ষিত। মা ইলিশ রক্ষায় দেশব্যাপী ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চললেও সীতাকুণ্ডে তা উপেক্ষা করে চলছে মাছ ধরার মহোৎসব। শত শত জেলে দিনরাত অবাধে ডিমওয়ালা মা ইলিশ শিকার করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জেলে জানান, ইলিশ গোপনে পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। পুরো উপজেলার মধ্যে ইলিশ মাছ কেনার বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট রয়েছে। তারা জেলেদেরকে বোট দিয়ে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে সাগরে পাঠান। অভিযানে কোনো জেলে আটক হলে সিন্ডিকেটের লোকজন আড়ালে থেকে জরিমানার টাকা পরিশোধ করেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, যেখান থেকে বোট ছাড়া হয় তা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত। পুলিশকে 'ম্যানেজ' করেই সম্ভবত এই বেআইনি কর্মকাণ্ড চলছে। কুমিরা ঘাট এলাকা থেকে মাত্র ২০০-৪০০ মিটার দূরে রয়েছে নৌ পুলিশ ফাঁড়ি এবং বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। অথচ তাদের সামনেই শত শত বোট নিয়মিত মাছ শিকার করলেও তা তাদের নজরে পড়ে না।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোতাছিম বিল্লাহ বলেন, "আজ শেষ অভিযান করেছি। সাগরে কোনো বোট নেই বললে চলে। আমরা এই ২২ দিনে ৪৪টি অভিযান করেছি, ৪টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি। ৪৪ হাজার মিটার জাল জব্দ করে বিনষ্ট করেছি, ৪টি মামলা মূলে ১১ জন জেলেকে জেল হাজতে প্রেরণ করি, ১৫টি বোট জব্দ করে ২ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করি, ৮০.৬৫ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ আটক করে সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসা ও এতিমখানায় বিতরণ করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় কিছু সিন্ডিকেটের কারণে আমরা পুরোপুরি সফল হতে পারিনি, তবে সামনের দিনে এ সিন্ডিকেট ভেঙে পুরোপুরি সফল হব বলে আমি আশা করছি। প্রতিদিন আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। তারপরও জনবল সংকট, পর্যাপ্ত যানবাহন না থাকা এবং বাজেটের অভাবের কারণে পুরো উপজেলার কার্যক্রম মনিটর করা কঠিন হয়ে পড়ছে। কোস্ট গার্ড ও নৌ পুলিশের সহযোগিতায় প্রতিদিনই অভিযান চালাচ্ছি, জেল-জরিমানা অব্যাহত রেখেছি।"



Comments