মাদারীপুরের শিবচরের মাদবরচর ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রাম চার বছর ধরে জলাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের সময় খালের মুখ বন্ধ করে দেওয়ায় এই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে প্রায় দেড় হাজার কৃষক বছরের পর বছর ফসল ফলাতে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
২০২১ সালে রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ চলাকালে রেললাইনের নিচে থাকা কালভার্টে খালের মুখ ভরাট করে দেওয়া হয়। তখন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন—কাজ শেষে খাল পুনঃখনন করে তা পাঁচ্চর খালের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। কিন্তু চার বছর পার হলেও সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি।
এতে হাজি নেদুখান চর কান্দি, হাজি নেদুখান পুরান কান্দি, শিকদার কান্দি, ফান্দি কান্দি ও আশপাশের গ্রামগুলো প্রায় সারা বছরই জলাবদ্ধ থাকে। বর্ষায় পানি নামতে না পারায় ধান নষ্ট হয়, আর শুষ্ক মৌসুমে জমি শুকাতে দেরি হওয়ায় আলু, গম, রসুন, পেঁয়াজ, সরিষা—কোনো ফসলই সময়মতো রোপণ করা যাচ্ছে না।
কৃষক আবুল কালাম খান বলেন, "রেল প্রকল্পের সময় কালভার্ট আর সুইচ গেট দেওয়া হয়েছিল আমাদের জমির পানি নিষ্কাশনের জন্য। কিন্তু এখনো আমরা পানিবন্দি। কেন পানি নামছে না, কেউ আমাদের উত্তর দেয় না।"
আরেক কৃষক রেজা খাঁন বলেন, "আমরা চাই প্রশাসন দ্রুত খালের মুখ খুলে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করুক। না হলে আমাদের জমি চাষের অযোগ্য হয়ে যাবে।"
স্থানীয়দের অভিযোগ, রেল প্রকল্পের সময় খাল পুনঃখননের আশ্বাস দিলেও কাজ শেষে কেউ আর ফিরেও তাকায়নি।
শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, "মাদবরচর ইউনিয়নের প্রায় ১৫০ একর জমি এখনো জলাবদ্ধ। রবি মৌসুম শুরু হলেও ফসল লাগানো যাচ্ছে না। আমরা স্থান পরিদর্শন করেছি এবং সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি।"
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এইচ. এম. ইবনে মিজান বলেন, "বিষয়টি জানার পর আমি নিজে গিয়ে সব পয়েন্ট পরিদর্শন করেছি। যেহেতু জায়গাটি রেল কর্তৃপক্ষের অধীনে, তাই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সমাধান হবে।"
বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী নাজনিন আরা কেয়া বলেন, "আমাদের পরিকল্পনা ছিল লাইন কেটে ড্রেন তৈরি করা, কিন্তু স্থানীয়ভাবে সেখানে মাটির রাস্তা তৈরি হওয়ায় কাজ থেমে যায়। উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ শুরু হচ্ছে—সমস্যা দ্রুতই সমাধান হবে।"




Comments