জামালগঞ্জে মরিচ, টমেটো চারায় ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে কৃষকের
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলা মরিচের জন্য প্রসিদ্ধ দেশজুড়ে। দেশি মরিচের উৎপাদন কম হওয়ায় কৃষক-কৃষাণীরা হাইব্রিড মরিচ চাষে ঝুঁকছেন। চারা উৎপাদন লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় মরিচ, টমেটো চারাসহ বিভিন্ন সবজির চারা উৎপাদনে ব্যস্ত জামালগঞ্জের কৃষক-কৃষাণীরা। তারা বাজার থেকে হাইব্রিড বীজ এনে ছোট ছোট শেডে মিনি পলিথিন ব্যাগে চারা তৈরি করে বিক্রি করছেন কৃষকদের কাছে। এই উপজেলায় কামিনীপুর, মমিনপুর, সংবাদপুর, রামপুর, ভূতিয়ারপুর, কাশিপুর, আলীপুরের শত শত কৃষক বেডে চারা উৎপাদন করে বিক্রি করছেন কৃষকদের কাছে। প্রতি বছরের মতো এবারও প্রায় শতাধিক বেডে মরিচ, টমেটো ও বিভিন্ন শাক-সবজির চারা তৈরি করে বিক্রি করছেন।
এক দশক আগেও জামালগঞ্জের কৃষকেরা বিভিন্ন উপজেলা থেকে চারা ক্রয় করে জমিতে রোপণ করতেন। চারা বিক্রি লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় প্রতিটি গ্রামের বাড়ির উঠানে পতিত উঁচু জায়গায় ছোট ছোট শেড তৈরি করে চারা বিক্রয় করে অনেকেই লাভবান হচ্ছেন। এ উপজেলার শতাধিক শেডে প্রায় অর্ধকোটি চারা উৎপন্ন হয়। এসব চারা নিজের উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য উপজেলায় বিক্রি করছেন। চারা উৎপাদন করে প্রতিটি কৃষক ৫০ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন। গত বছর অতি বৃষ্টিতে চারা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় উৎপাদনকারীরা গতবারের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বীজতলাগুলোর চারা রক্ষায় নানা রঙের পলিথিনের ছাউনি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। বাঁশের চটি দিয়ে ছোট ছোট ঘরের মতো করে প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় শেড তৈরি করে পলিথিনে বীজ বপন করে ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে চারা গজিয়ে ওঠে। প্রথমে মরিচ চারা, পরে একই শেডে টমেটো সহ ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন সহ বিভিন্ন জাতের সবজির চারা উৎপাদন করা হয়। চারা সংগ্রহ করতে বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকেরা এসে নিয়ে যায়। আবার কেউ বিভিন্ন হাট-বাজারে নিয়ে বিক্রি করছে।
কামিনীপুর গ্রামের পিয়ারী দেবনাথ বলেন, ২ শতক জায়গায় ছোট বেড তৈরি করে হাইব্রিড মরিচের চারা রোপণ করেছি। বেডে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার চারা উৎপাদন হবে। বীজ, সার সহ বেড তৈরিতে খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ২০ হাজার টাকার চারা বিক্রি করেছি। প্রতি বছরেই বীজতলা করে চারা উৎপাদন করে নিজের জমিতে রোপণ করার পর বাকি চারা চাষিদের মাঝে বিক্রয় করে দেই।
একই গ্রামের কৃষাণী মমতাজ বেগম বলেন, দেড় শতক পতিত জায়গায় শেড তৈরি করে চারা রোপণ করেছি। এ পর্যন্ত ৩ হাজার চারা আড়াই টাকা করে বিক্রি করেছি। আরও ৮ থেকে ১০ হাজার চারা বিক্রয় হবে। খরচ হয়েছে ৮ হাজার টাকা। চারা বিক্রয় হবে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। মরিচের বীজ ২০ দিনে চারা হয়ে যায়। এই চারা ২/৩ দিনের মধ্যে বিক্রি হয়ে গেলে একই জায়গায় ১০ হাজারের মতো টমেটো চারা বীজ রোপণ করবো। ২০/২৫ দিনের মধ্যে টমেটো চারা তৈরি হলে প্রতিটি চারা ৪ থেকে ৫ টাকা করে বিক্রি হবে। মরিচ ও টমেটো চারা বিক্রি করে দেড় মাসে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। আমার সাথে স্বামী ও সন্তানেরা চারা আবাদ ও বিক্রয়ের কাজে সহযোগিতা করে থাকেন। তিনি আরও জানান, প্রায় ৩ বছর যাবৎ চারা বিক্রয় করে এখন তিনি স্বাবলম্বী। বৃষ্টি হলে চারা নষ্ট হয়ে যেতে পারে তাই বাঁশের চটি দিয়ে শেড তৈরি করে চারা উৎপাদন করেন। শেডে পলিথিন দিয়ে ঢাকা থাকার কারণে বৃষ্টি ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়। প্রতিদিনই পানি দিতে হয়, শুধু আমি নই আমার মতো আরও ১০/১২ জন শেডে চারা তৈরি করে বিক্রয় করে লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার সাহা জানান, এই উপজেলায় শতাধিক কৃষক মরিচ, টমেটো এবং বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজির চারা বিক্রয় করে লাভবান হচ্ছেন। ঝড়বৃষ্টি ও পোকামাকড় থেকে চারা রক্ষায় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ মাঠে চাষিদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর চারা উৎপাদনকারী প্রায় অর্ধলক্ষ টাকার চারা উৎপাদন করতে পারবেন।



Comments