স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে স্বামীর বাড়িতে অনশনে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা নারী
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার রসুলপুর গ্রামে স্ত্রীর স্বীকৃতি এবং অনাগত সন্তানের দাবিতে স্বামীর বাড়িতে অনশনে বসেছেন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা সিফা নামের এক নারী। বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনা ঘটে, যা স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, রসুলপুর গ্রামের দুলাল গাজীর ছেলে কবির গাজী তার প্রথম বিয়ের বিষয় গোপন রেখে মোবাইল ফোনে পরিচয়ের সূত্র ধরে রাজশাহীর বাসিন্দা সিফার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে শরিয়ত মোতাবেক তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। কিন্তু বিয়ের কয়েক মাস পর থেকে কবির স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। স্বামীর খোঁজে সিফা ডালবুগঞ্জে আসেন, কিন্তু এ খবর ছড়িয়ে পড়লে কবিরের পরিবার বাড়িতে তালা দিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়। ফলে সিফা এখন সেই বাড়িতেই অনশন করে দাবি আদায়ের চেষ্টা করছেন।
সিফা অভিযোগ করেন, "বিয়ের পর বিদেশে যাওয়ার কথা বলে কবির আমার কাছ থেকে কয়েক দফায় ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা নিয়েছে। এখন আমাকে ডিভোর্স দিয়ে সম্পর্ক অস্বীকার করছে। এমনকি আমার ছবি এডিট করে অশ্লীল ভিডিও বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছে।"
স্থানীয় ইউপি সদস্য সোহেল হাওলাদার বলেন, "মেয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেছিলাম। ছেলে পক্ষকে ইউনিয়ন পরিষদে ডেকেছিলাম, কিন্তু তারা আসেনি। মেয়েটি এখন খুব কষ্টে আছে।"
রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কাদের জানান, "মেয়েটার সঙ্গে বড় অন্যায় হয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় এভাবে কাউকে পরিত্যাগ করা অমানবিক।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক গৃহবধূ বলেন, "আমরা দেখেছি মেয়েটা বাড়ির সামনে বসে আছে। কেউ তার খবর নিচ্ছে না। শ্বশুর বাড়ির লোকজন ঘর তালা দিয়ে পালিয়ে রয়েছে। এটা খুবই লজ্জার বিষয়।"
অভিযুক্ত কবির গাজীর মুঠোফোন একাধিকবার কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়, ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। কবিরের বাবা দুলাল গাজী মুঠোফোনে বলেন, "আমরা পারসোনাল কাজে বাড়ি থেকে দূরে আছি। ছেলে বিয়ে করেছে আমাদের না জানিয়ে। মেয়ে এখানে আসছে তাও আমাদের সাথে যোগাযোগ করে আসেনি।"
মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহমুদ হাসান বলেন, "এ বিষয়ে এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
এ ঘটনা নারীর অধিকার এবং পারিবারিক সংকটের একটি উদাহরণ হিসেবে স্থানীয় সমাজে চর্চা হচ্ছে। সিফার এই অনশন কতদিন চলবে এবং বিষয়টির সমাধান কীভাবে হবে, তা নিয়ে সকলের দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে।




Comments