Image description

হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস)-এর দুই পরিচালক শাহ আলম ও সেলিম মিয়ার বিরুদ্ধে উঠেছে ঘুষ দাবি ও অর্থ আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। মাধবপুর উপজেলার পাটলা ‘গণক সে’ প্রকল্পের ম্যানেজার ইমতিয়াজ আব্দুল্লাহ এই গুরুতর অভিযোগটি এনেছেন, যা বর্তমানে হবিগঞ্জজুড়ে আলোচনার ঝড় তুলেছে।

ইমতিয়াজ আব্দুল্লাহ তার লিখিত অভিযোগে জানান, তার মিটার নং ২০১২০০৬৭৯৭ ও হিসাব নং ২৯১-৪০১০–এর বিপরীতে হঠাৎ করেই প্রায় ২ লক্ষ ৪ হাজার ৪৬১ টাকা বকেয়া দেখানো হয়। এই অস্বাভাবিক বিল দেখে তিনি হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অফিসে যোগাযোগ করেন। অভিযোগ অনুযায়ী, এরপর স্থানীয় ১২নং এলাকার পরিচালক ও সমিতির বর্তমান সভাপতি শাহ আলম এবং বানিয়াচং এলাকার পরিচালক সেলিম মিয়া তাকে হবিগঞ্জ পবিসের বাংলোতে ডেকে পাঠান।

সেখানে শাহ আলম ইমতিয়াজকে সরাসরি প্রস্তাব দেন: “যদি এক লক্ষ টাকা দিতে পারো, তবে সব ঝামেলা মিটে যাবে।” ইমতিয়াজ আব্দুল্লাহ জানান, তিনি তৎকালীন জেনারেল ম্যানেজার গোলাম কাউছার তালুকদারকেও বিষয়টি অবহিত করেন, কিন্তু তিনিও দুই পরিচালকের পরামর্শ মতো চলতে বলেন। নিরুপায় হয়ে ইমতিয়াজ শাহ আলমের হাতে এক লক্ষ টাকা তুলে দেন, যা তিনি আর ফেরত পাননি।

পরবর্তীতে, দুই পরিচালক নানা অজুহাতে বিষয়টি এড়িয়ে যান। অভিযোগকারীর দাবি, স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধির সামনেও তারা ঘটনাটির আংশিক সত্যতা স্বীকার করেছেন।

অভিযোগে সাক্ষী হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তারা হলেন:

১. হাজী আরজু মিয়া, সাং-বিরামচর
২. মো. রাহেল কমিশনার, সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান, শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভা
৩. আব্দুশ শহিদ, চেয়ারম্যান, ৮নং শায়েস্তাগঞ্জ ইউপি
৪. এডভোকেট জিয়াউর রহমান, জজ কোর্ট, হবিগঞ্জ
৫. এডভোকেট শামীম হাসান, জজ কোর্ট, হবিগঞ্জ

ইমতিয়াজ আব্দুল্লাহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দুই পরিচালকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সভাপতি ও পরিচালক শাহ আলম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে কে বা কারা অভিযোগ করেছে, আমি তা জানি না। যদি কেউ করে থাকে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”

অন্যদিকে, পরিচালক সেলিম মিয়ার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আইন উপদেষ্টা এডভোকেট জয়নাল আবেদীন এই অভিযোগের সত্যতা নিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেন, “শাহ আলমের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। পরিচালক পদে যোগদানের পর থেকেই ঘুষ গ্রহণ ও অনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ একাধিকবার এসেছে। তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রভাব খাটিয়ে তিনি বিষয়গুলো সামলে নিচ্ছেন।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, “জিএমসহ কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে নিয়মিত উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে পরিচালক শাহ আলম সমিতির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছেন। আমরা এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আশা করছি।”

হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার জিল্লুর রহমান বলেন, “ইমতিয়াজ আব্দুল্লাহর করা অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা চলছে। তবে যেহেতু অভিযোগ এসেছে, প্রাথমিক তদন্ত শেষে প্রমাণ মিললে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

জানা গেছে, গত ১৪ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে ইমতিয়াজ আব্দুল্লাহ বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করেছেন। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ফকির শরিফ উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এই অভিযোগের তদন্ত কতটা দূর গড়ায় এবং এর পরিণতি কী হয়, তা জানতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে এলাকাবাসী।