Image description

একসময় গ্রামবাংলার অলিগলিতে গরু বা মহিষের গাড়ির শব্দে মুখরিত থাকত সকাল-বিকেল। বিয়েবাড়ি, হাটবাজার কিংবা কৃষকের ফসল পরিবহনে অপরিহার্য মাধ্যম ছিল এই ঐতিহ্যবাহী গাড়ি। কিন্তু আধুনিকতার দাপটে এখন তা হারিয়ে যাওয়ার পথে। সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর, রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলায় শত শত মহিষের গাড়ি চলাচল করলেও এখন সেই দৃশ্য বিরল হয়ে উঠেছে। নছিমন, করিমন, অটোরিকশা, ট্রাক ও ভ্যানের আধিপত্যে বিলীন হচ্ছে এই গ্রামীণ পরিবহন ব্যবস্থা।

কাজিপুর উপজেলার চরগিরিশ এলাকায় সম্প্রতি দেখা মিলেছে একটি মহিষের গাড়ি। হাল ধরে আছেন রাকিব ইসলাম নামে এক গাড়িয়াল। মুখে ক্লান্তির ছাপ, চোখে স্মৃতি আর ভালোবাসার ছোঁয়া। ছোটবেলা থেকে বাবার সঙ্গে গাড়ি চালানো রাকিব মহিষগুলোকে পরিবারের সদস্যের মতো লালন করেন।

রাকিব বলেন, “এখন আর আগের মতো কাজ নেই। মানুষ দ্রুত যেতে চায়, তাই গরু-মহিষের গাড়ি ব্যবহার করে না। তবু শখের বসে করে যাচ্ছি। আয় কম হলেও মন ভরে যায়।”

রোজগার প্রসঙ্গে তিনি জানান, কাজ পেলে দিনে খরচ বাদে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা আয় হয়। কিন্তু প্রতিদিন কাজ মেলে না। ফলে অনেকে এ পেশা ছেড়ে অন্য কাজে চলে গেছেন। মহিষের খাবারের দাম বৃদ্ধিতে কষ্ট আরও বেড়েছে। “নিজেরা না খেয়ে থাকলেও মহিষের খাবার দিতে হয়। খাদ্যের দাম বেশি, পালা কঠিন হয়ে গেছে,” যোগ করেন রাকিব।

সচেতন মহলের মতে, প্রযুক্তির অগ্রগতিতে আগামী প্রজন্ম শুধু পাঠ্যবই বা পুরোনো ছবিতে দেখবে মহিষের গাড়ি। এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে স্থানীয় পর্যায়ে প্রদর্শনী, ঐতিহ্য মেলা বা সংরক্ষণ উদ্যোগ জরুরি।

একসময় গ্রামীণ জীবনের প্রতীক এই গাড়ি আজ শুধু স্মৃতি। আধুনিকতার দৌড়ে পিছিয়ে পড়া এ ঐতিহ্য নিঃশব্দে হারিয়ে যাচ্ছে ইতিহাসের পাতায়।