Image description

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ডিপিডিসির (ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি) কর্মকর্তাদের চরম গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। ট্রান্সফরমার পরিবর্তনের সময় লাইনের বিদ্যুৎ সংযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন না করায় ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের ঝটকায় মো. নজরুল ইসলাম (৪৮) নামে এক বিদ্যুৎ লাইন টেকনিশিয়ানের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় গুরুতর দগ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন আরও দুই কর্মী।

বুধবার (২৬ নভেম্বর) সকাল পৌনে ১১টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের নাসিক ৬ নং ওয়ার্ডের সোনামিয়া বাজার সংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত নজরুল ডিপিডিসির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে কাজ করতেন। গুরুতর আহত দুজন হলেন— আব্দুল করিম (৩৫) ও আব্দুল রাজ্জাক (৩৬)। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে তাৎক্ষণিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, সকালে ডিপিডিসির ঠিকাদার আব্দুর রহমানের তত্ত্বাবধানে ৯ জন কর্মী ও ডিপিডিসির লাইনম্যান আক্তার হোসেন সোনামিয়া বাজার এলাকায় একটি পুরোনো ট্রান্সফরমার পরিবর্তনের কাজে যান। কাজ শুরুর আগে লাইনম্যান আক্তার মোবাইল ফোনে ডিপিডিসির কন্ট্রোল রুমের কর্মকর্তা মো. শাহআলম ও উজ্জ্বলকে লাইন বন্ধ করার নির্দেশ দেন। কিছুক্ষণ পর তারা লাইন বন্ধ হয়েছে বলে নিশ্চিত করলে লাইনম্যান আক্তার টেকনিশিয়ান নজরুলকে খুঁটিতে উঠে কাজ শুরু করতে বলেন।

নজরুল খুঁটিতে উঠে ট্রান্সফরমারের সংযোগ খোলার সময় হঠাৎ ১১ কেভি লাইনে বিদ্যুৎ সঞ্চালন শুরু হলে তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে খুঁটির সঙ্গেই আটকে যান। সহকর্মীদের চিৎকারে আব্দুল করিম ও আব্দুল রাজ্জাক তাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে তারাও বিদ্যুতের ঝটকায় মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন।

খবর পেয়ে আদমজী ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিনজনকেই উদ্ধার করে। পরে নজরুলকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

ঘটনার পর থেকে এলাকাজুড়ে ডিপিডিসি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, লাইনের বিদ্যুৎ নিশ্চিতভাবে বন্ধ না করে কাজের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ গাফিলতি ও মানবিক বিপর্যয়।

এ বিষয়ে ডিপিডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত অধিকারী বলেন, “কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল তা এখনো স্পষ্ট নয়। আমরা বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখছি। দায়িত্বে অবহেলা ছিল কি না, তা জানতে উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।”

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহিনুর আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “একজন নিহত ও দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।”

বিদ্যুৎ কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার মান নিয়ে এ ঘটনায় নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পরই পুরো ঘটনার প্রকৃত কারণ ও দায়ী ব্যক্তিদের বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।