পীরগঞ্জে পরকীয়ার অপবাদে সালিশে নির্যাতন, গৃহবধূর আত্মহত্যা
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে পরকীয়া প্রেমের অপবাদ দিয়ে এক গৃহবধূকে দিনভর নির্যাতন ও সালিশি বৈঠকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের বিরুদ্ধে। এই অপমান সইতে না পেরে তৃপ্তি রায় (২৩) নামের ওই গৃহবধূ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) ভোরে উপজেলার ১১নং বৈরচুনা ইউনিয়নের নওডাঙ্গা নয়াপাড়া এলাকায় একটি পুকুর পাড়ের গাছে তার ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া যায়। নিহত তৃপ্তি রায় দক্ষিণ দোপাইল গ্রামের যতিশ চন্দ্র রায়ের স্ত্রী।
এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ দোপাইল গ্রামের উপেন মাস্টারের ছেলে পবিত্র চন্দ্র রায়ের সাথে গৃহবধূ তৃপ্তি রায়ের পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে এমন সন্দেহে শনিবার সকালে তৃপ্তিকে ধরে নিয়ে যান পবিত্র রায়ের স্ত্রী কিরণ মালা। সেখানে তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে কিরণ মালা ও তার ছেলে চিরঞ্জিৎ রায় তৃপ্তিকে মারধর করেন।
পরে বিষয়টি মীমাংসার জন্য বৈরচুনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টেলিনা সরকার হিমুকে ডেকে এনে পবিত্র রায়ের বাড়িতে সালিশ বসানো হয়। অভিযোগ উঠেছে, সালিশি বৈঠকে চেয়ারম্যান টেলিনা সরকার হিমু ও ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মুসলিম উদ্দীন ওই গৃহবধূকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং সবার সামনে চড়-থাপ্পড় মারেন।
সালিশ শেষে তৃপ্তি রায়কে তার স্বামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হলে স্বামী যতিশ চন্দ্র রায় তাকে ঘরে তুলতে অস্বীকৃতি জানান। রোববার সকালে স্থানীয়রা নওডাঙ্গা নয়াপাড়া এলাকার আনোয়ার হোসেনের পুকুর পাড়ে একটি জাম্বুরা গাছে তৃপ্তির ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পান।
নিহতের স্বামী যতিশ চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমার স্ত্রীকে পরকীয়ার অপবাদ দিয়ে দিনভর নির্যাতন করে আমার কাছে পাঠানো হয়। বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত আমি তাকে ঘরে তুলতে রাজি হইনি। অপমান ও লজ্জা সইতে না পেরে সে হয়তো আত্মহত্যা করেছে।’
নিহতের বাবা শিরেন চন্দ্র রায় অভিযোগ করে বলেন, ‘শালিস বৈঠকের নামে আমার মেয়েকে দিনভর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। বৈঠকের পর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। সকালে জামাই আমাকে ফোনে মৃত্যুর খবর দেয়। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’ এ ঘটনায় তিনি থানায় এজাহার দায়ের করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ইউপি সদস্য মুসলিম উদ্দীনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে বৈরচুনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টেলিনা সরকার হিমু বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি সাংবাদিকদের কিছু বলবো না। থানায় যেহেতু এজাহার হয়েছে, পুলিশ তদন্ত করে দেখুক। তদন্তেই আসল সত্য বেরিয়ে আসবে।’
পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘রোববার সকালে ওই গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঠাকুরগাঁও মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের বাবা বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। এটি আত্মহত্যা নাকি হত্যা, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’




Comments