Image description

বরগুনার বেতাগী ও বামনা উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বিষখালী নদীতে জেগে ওঠা ‘রুহিতার চর’-এর স্থায়ী সীমানা নির্ধারণ এবং নিরীহ কৃষকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা বিরোধপূর্ণ মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় ‘উপজেলার সর্বস্তরের নাগরিক’-এর ব্যানারে বরগুনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই চরের মালিকানা ও সীমানা নিয়ে দুই উপজেলার মধ্যে বিরোধ এবং উত্তেজনা বিরাজ করছে।

সরেজমিনে ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ বছর ধরে রুহিতার চরের জমি বামনা ও বেতাগী দুই উপজেলার মানুষ সমানভাবে ভোগদখল করে আসছিল। কিন্তু মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা অভিযোগ করেন, গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পুরো রুহিতার চরটি বামনা উপজেলার লোকজন জোরপূর্বক দখলে নিয়েছে। এ সময় চরে বেতাগী উপজেলার কৃষকদের ফলানো ধান ও ডালসহ বিভিন্ন ফসল লুটপাট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে।

স্থানীয়রা জানান, বেতাগীর বেশ কয়েকটি গ্রাম নদীভাঙনের কবলে পড়ায় অসংখ্য পরিবার বর্তমানে ভূমিহীন অবস্থায় রয়েছে। মূলত রুহিতার চরের জেগে ওঠা অংশটি বেতাগী মৌজার অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী মহল বিষয়টি উপেক্ষা করে জোরজবরদস্তি করে চরটি দখলে নিতে চায়।

নদীর দুই তীরের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিরোধের সূত্রপাত হয় গত ২৯ জুলাই। ওইদিন চরটির মালিকানা দাবি করা বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ী এলাকার কৃষকরা পাওয়ার ট্রিলার ও মাহেন্দ্র নিয়ে চরে চাষাবাদ করতে গেলে বামনা উপজেলার লোকজন তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে কয়েকটি পাওয়ার ট্রিলার ও মাহেন্দ্রসহ দুজন চাষিকে ধরে নিয়ে যায় বামনার লোকজন। এর জেরে প্রতিশোধ হিসেবে বামনা উপজেলার কৃষকদের প্রায় একশ মহিষ আটকে রাখে কালিকাবাড়ীর কৃষকরা। বিষয়টি বেতাগী ও বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) জানালে তারা ৩০ জুলাই উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। তখন আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, চলতি শুষ্ক মৌসুমে চরটি মেপে সীমানা নির্ধারণ করে দুই উপজেলাকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

কিন্তু সেই আশ্বাস বাস্তবায়নের আগেই কৃষকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেতাগী উপজেলার বুড়ামজুমদার ও কালিকাবাড়ির বাসিন্দা জাকির হোসেন (৩০) অভিযোগ করেন, চর সংশ্লিষ্ট বামনা উপজেলার পূর্ব সফিপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত আব্দুল হাশেম মল্লিকের ছেলে মো. হারুণ মল্লিক বাদী হয়ে বেতাগীর ২২ জন নিরীহ কৃষকের বিরুদ্ধে বরগুনার বামনা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। গত ২৪ নভেম্বর (মামলা নং-৩৩৫/২০২৫) ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ও ১৪৫ ধারায় মামলাটি করা হয়। এছাড়া ৩ ডিসেম্বর (সিআর-৩৫৫) ও ৯ ডিসেম্বর (সিআর-২১২) তাদের বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা করা হয়েছে।

মামলার অপর আসামী ও বয়োজ্যেষ্ঠ কৃষক আব্দুর রব সিকদার (৬০) বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।’ এ বিষয়ে মামলার বাদী মো. হারুণ মল্লিকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বেতাগী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক পৌর মেয়র মো. শাহজাহান কবির বলেন, ‘বেতাগীর শত শত একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে ওপারে বামনায় চর জেগেছে। ওই চর নিয়ে আমাদের দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত ঝামেলা রয়েছে। চরের অধিকাংশ সম্পত্তি মূলত বেতাগী উপজেলার। ভাঙনে সর্বস্বান্ত হওয়া বেতাগীর ভূমিহীন মানুষেরা আজ মানবেতর জীবনযাপন করছে, তাই এই চরে তাদের ন্যায্য অধিকার রয়েছে।’

এ বিষয়ে বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহ. সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। দুই উপজেলার ইউএনও, এসিল্যান্ড ও থানার অফিসার ইনচার্জদের (ওসি) নিয়ে আমরা শীঘ্রই বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেব। আশা করি, আলোচনার মাধ্যমে খুব দ্রুত একটি শান্তিপূর্ণ সমঝোতায় পৌঁছাতে পারব।’