Image description

মহান বিজয় দিবসে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের পবিত্রতা ক্ষুণ্ন করে ভেতরেই বসানো হয়েছে শতাধিক অস্থায়ী দোকান। ফুসকা, ঝালমুড়ি থেকে শুরু করে ফাস্টফুডের পসরা সাজিয়ে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণকে রীতিমতো বাজারে পরিণত করার অভিযোগ উঠেছে। এসব দোকান বসানোর বিনিময়ে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায়েরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, স্মৃতিসৌধের ১০৮ হেক্টরের পবিত্র অঙ্গনের মূল ফটক ও হেলিপ্যাড এলাকাজুড়ে বসেছে শতাধিক দোকান। মূল ফটক দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে সারি সারি ভ্যানে হরেক খাবারের আয়োজন। চটপটি, ফুসকা, ঝালমুড়ি, পিৎজা, বার্গার, স্যান্ডউইচ এমনকি সানগ্লাসসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকানও সেখানে স্থান পেয়েছে।
দর্শনার্থীদের ভিড়ের মধ্যে যত্রতত্র দোকান বসানোয় স্মৃতিসৌধের ভাবগাম্ভীর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি চলাচলে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শ্রদ্ধা জানাতে আসা সাধারণ মানুষ।
আশরাফুল ইসলাম নামের এক দর্শনার্থী বলেন, “স্মৃতিসৌধের ভেতরে এত দোকান আগে কখনো দেখিনি। মনে হচ্ছে কোনো মেলা বা বাজার বসেছে। ভিড়ের মধ্যে দোকানগুলোর কারণে চলাচল করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।”
স্থানীয় বাসিন্দা সজিব হাসান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ফুল দিতে এসে দেখি শত শত দোকান। মনে হচ্ছে পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকা দোকানদারদের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সমাধিস্থলে এমন পরিবেশ অত্যন্ত দুঃখজনক।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক দোকানদার জানান, স্মৃতিসৌধ এলাকার কিছু ‘অসাধু লোক’ ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের টাকা দিয়েই তারা দোকান বসিয়েছেন। এক ঝালমুড়ি বিক্রেতা বলেন, “ছোট দোকান থেকে ৫০০ টাকা এবং বড় দোকান থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। বাড়তি বেচাকেনার আশায় আমরা টাকা দিয়েই বসেছি।”
স্মৃতিসৌধের মতো কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টিত এলাকায় কীভাবে এত দোকান বসল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছেন স্মৃতিসৌধের দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন আনু। তিনি বলেন, “গেটের নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল ঢাকা জেলা পুলিশ। গেটে পর্যাপ্ত পুলিশ থাকা সত্ত্বেও কীভাবে দোকানগুলো ভেতরে ঢুকল, তা বোধগম্য নয়। হয়তো কেউ কেউ দেয়াল টপকে বা ভিড়ের সুযোগে ঢুকে পড়েছে। আমরা তাদের বের করে দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
এ বিষয়ে ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধের মতো স্পর্শকাতর ও পবিত্র স্থানে এমন বাণিজ্যিকীকরণ ও চাঁদাবাজির ঘটনাকে শহীদদের প্রতি চরম অবমাননা বলে মনে করছেন সচেতন মহল।