Image description

ময়মনসিংহের ভালুকায় এক সময়ের গ্রাম বাংলার মাঠের শোভা মাঝখানে হারিয়ে যাওয়া অর্থকরি ফসল সরিষার আবাদ গত বারের চেয়ে এ বছর কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন। এক সময় গ্রামের আনাচে কানাচে চোখ রাখলেই দেখা মিলতা শুধু সরিষা ফুলের দিগন্ত জোড়া মাঠ। 

উঠানে রাখা সরিষা গাছ রোদে শুকিয়ে খোলস ছাড়ানো সরিষা দানায় ভর্ উঠতো কৃষকের আঙ্গিনা। গ্রামের কুলু সম্প্রদায় নিজস্ব প্রযুক্তিতে গরুদিয়ে কাঠে তৈরী ঘানিকলে সরিষা হতে তৈরী করতেন ঘন ভোজ্য তৈল যা রান্না সহ শরীরে মাখানোর কাজে ছিল সকলের প্রিয়। 

নিজের ক্ষেতের উৎপাদিত সরিষা গ্রামের কুলু বাড়ীতে নিয়ে ঘানিতে তৈল ভাঙ্গিয়ে এনে ঘানি টানা সরিষার তৈল দিয়ে মুখরোচক সবজি ভর্তা ভাজি রান্না যেন অকল্পনীয় বিষয় ছিল। সরিষা গাছে ফুল আসার পূর্বে কাঁচা পাতা শাখ, সরিষা ফুলের ভাজি বরা হিসেবে খেতে খুবই সুস্বাদু। আমসত্ব,বড়ই, চালতা, জলপাই ইত্যাদি আচার তৈরীতে সরিষার তৈল অত্যাবশ্যকীয়। পিঠা পুলি তৈরীতে খাটি সরিষার তৈলের জুরি নেই। 

সরিষার ইলিশবাটা, কাশদি কার না প্রিয়। আধুনিকায়ন ও বিজ্ঞানের উন্নত প্রযুক্তির কাছে আদিকালের কাঠের তৈরী ঘানিকল এখন হারানো দিনের স্মৃতি চারণ মাত্র। বিদেশের উৎপাদিত সায়াবিন, পামওয়েল এক সময় এদেশর বাজার দখল করে নেয়ায় ঘানি শিল্পের সাথে জড়িত পরিবার গুলো ব্যবসায়িক লোকসানের মুখে পরে যায়। দিনরাত যেসব বাড়ীতে ঘানি টানা যাতা কলের কচাং কচাং শব্দ হত যা কালের বিবর্তনে এক সময় নিঃশব্দ মিলিয়ে যায়। 

সরিষার বিকল্প ভোজ্যতৈল বাজারে আসায় প্রভাব পরে কৃষকের অর্থকরি ফসল সরিষার উপর। মৌমাছিরা সরিষা ফুল হতে মধু আহরণ করে বন জঙ্গলে গাছের ডালে মৌচাক তৈরী করে যা থেকে খাটি মধু পাওয়া যায়। আবার অনেকে বানিজ্যিক ভাবে শুষ্ক মৌসুমে মধু উৎপাদনর জন্য সরিষার আবাদ কর বাক্স মমাছি পালনর মাধ্যম লাভবান হয়। 

উপজেলার ডাকাতিয়া, মেদুয়ারী কাচিনা, হবিরবাড়ী, ধীতপুর, বিরুনিয়া, মল্লিকবাড়ী, ও উথুরা ইউনিয়নের বিভিন গ্রামে এ বছর চাষীরা সরিষা আবাদ করছেন। সম্প্রতি সরিষা আবাদ কৃষকের মধ্যে নতুন করে সারা জাগালেও হারিয়ে গেছে ঐতিয্যবাহী ঘানি কল। এ বছর ভালুকায় সরিষার ফলন মোটামোটি ভাল হয়েছে। 

উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের ধানকুড়া গ্রামের কৃষক আশিকুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে ৪ কাঠা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। তিনি জানান সরিষা আবাদ অন্যান্য ফসলের চেয়ে খরচ কম হয় দামও ভাল পাওয়া যায়। তিনি ৩৫০ টাকার সরিষা বীজ কিনে ক্ষেতে বপন করেছেন। একই গ্রামের কৃষক ছমেদ আলী ৫ কাঠা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। নতুন সরিষা ৩৫ শ টাকা হতে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতিমণ বিক্রি করা যায়। 

অনেকের মতে সায়াবিন তৈলের চেয়ে সরিষা খাদ্য হিসেবে অধিক স্বাস্থ্য সম্মত আর নিজের ক্ষেতের সরিষা স্থানীয় মিল হতে ভাঙ্গিয়ে নিজেদের প্রয়োজনে সারা বছর ব্যবহার করা যায়। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত জামান জানান চলতি ২০২৫/২৬ রবি মসুম সরিষা আবাদের লক্ষ মাত্রা ধরা হয়েছে ১৫৯৫ হেক্টর অর্জিত হয়েছে ৯০০ হেক্টরের মত। প্রণোদনা বিতরণ ২০২৫/২৬ অর্থ বছরে কৃষক ৭০০ জন, বীজ ৭০০ কেজি, ডিএপি সার ৭০০০ কেজি ও এমওপি সার ৭০০০ কেজি কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে প্রতি হেক্টরে ১.১৫ মেট্রিক টন ফলন পাওয়া যাবে।

আগাম আমন ধান কাটার পর টানি জমিতে কার্তিক অগ্রহায়ন মাসের শুরুতে সরিষা বীজ বপন করায় ব্যস্ত থাকেন চাষীরা। সরিষা ক্ষেত বীজ বপনের পূর্ব সার প্রয়োগ করলেও পরে তেমন একটা সারের প্রয়োজন হয়না। তাছারা পানি সেচ ও নিরানীর প্রয়োজন না হওয়ায় অন্যান্য ফসলের চেয়ে চাষীদর জন্য সরিষা আবাদ অধিক লাভ জনক। সরিষা মাড়াই করে ওই জমিতে কৃষকেরা বোর ধানের আবাদ করতে পারেন। 

চলতি মৌসুমে ভালুকায় উচ ফলনশীল জাতের সরিষা বীনা ৫, ৭, বারি ৯, বারি ১৪, বারি ১৭ ও স্থানীয় টরি ৭ জাতের সরিষার আবাদ হয়েছে। সরকারী সহযোগিতা পেলে আগামীতে আরও অধিক জমিতে সরিষা আবাদ করবেন বলেও চাষীরা জানান।