Image description

টানা ছুটিতে ঝুলন্ত সেতুতে পর্যটকের ঢল

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য আর মেঘ-পাহাড়ের মিতালি উপভোগ করতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে রূপের রাণী রাঙ্গামাটি। বছরের শেষ সময়ে টানা তিনদিনের ছুটির আমেজে কাপ্তাই হ্রদ আর পাহাড়ের টানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এখন এই পর্যটন নগরীতে। ভ্রমণপিপাসুদের এই ভিড় রাঙ্গামাটির পর্যটন শিল্পে নতুন প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে এনেছে। যেন প্রকৃতির কোলে হাজারো প্রাণ, যা আগামী কয়েক দিন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাঙ্গামাটির প্রধান পর্যটন আকর্ষণ ঝুলন্ত সেতু, সুবলং র্ঝনা, আরএইচডি লেক ভিউ গার্ডেন, পলওয়ে পার্ক এবং মেঘের রাজ্য হিসেবে পরিচিত সাজেক ভ্যালিতে এখন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। বিশেষ করে পর্যটনের ঝুলন্ত সেতুতে এবং সাজেকের রুইলুই পাড়া ও কংলাক পাহাড়ে মেঘের লুকোচুরি দেখতে পর্যটকদের দীর্ঘ সারি লক্ষ্য করা গেছে।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বছরের এই শেষার্ধে রাঙ্গামাটির প্রায় শতাধিক হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট শতভাগ বুকিং হয়ে আছে। পর্যটকদের এই বাড়তি চাপে হিমশিম খাচ্ছেন চালক ও গাইডরা।

এদিকে পর্যটকে কাপ্তাই হ্রদে নৌ-ভ্রমণও জমজমাট হয়ে উঠেছে। ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চড়ে পর্যটকরা উপভোগ করছেন পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বয়ে চলা স্বচ্ছ জলরাশি। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক নাঈম জানান, “শহরের কোলাহল থেকে দূরে কাপ্তাই হ্রদের এই শান্ত পরিবেশ আমাদের মুগ্ধ করেছে। বিশেষ করে ঝুলন্ত সেতুতে দাঁড়িয়ে যখন চারপাশ দেখি, মনে হয় যেন প্রকৃতির মাঝে দোল খাচ্ছি।”

তিনি আরো জানান, বিভিন্ন দেশে ঘুরাঘুরি করেছি কিন্তু রাঙ্গামাটির মতো এত ভালো লাগেনি।

নোয়াখালী থেকে আসা পর্যটক মোঃ হানিফ জানান, “যান্ত্রিক জীবনের একঘেয়েমি কাটাতে পাহাড়ের এই নিস্তব্ধতা আর মেঘের লুকোচুরি সত্যিই এক অনন্য প্রশান্তি। এখানে এসে মনে হচ্ছে পাহাড়ের বুকেই প্রাণের সবটুকু স্পন্দন লুকিয়ে আছে।”

ঢাকার সাভার থেকে আসা পর্যটক নাজরীন নাহার জানান,“ নীল জল আর সবুজ পাহাড়ের প্রকৃতি আমাকে মুগ্ধ করেছে। সবকিছু মিলে খুবই ভালো লাগছে”।  

এদিকে, পর্যটকদের এই বিপুল উপস্থিতিতে স্থানীয় অর্থনীতিতে বইছে সুবাতাস। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর হস্তশিল্প থেকে শুরু করে স্থানীয় খাবারের দোকানগুলোতেও দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।]

রাঙ্গামাটি হোটেল-মোটেল মালিকরা জানান, পর্যটকদের এই ঢল স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। রাঙ্গামাটির অধিকাংশ হোটেল ও রিসোর্ট এখন অগ্রিম বুকিং হয়ে আছে।

সাজেক ভ্যালির রিসোর্ট মালিক সুবর্ণ দেব বর্মন জানান, "এ বছর পর্যটকদের উপস্থিতি গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আমাদের কোনো রুম খালি নেই।"

সাজেক রির্সোট-কটেজ মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক রাহুল চাকমা জন জানান, সাজেকে বর্তমানে পর্যটকে ভরপুর। পুরো ডিসেম্বর মাসে ইতোমধ্যে সব রির্সোট-কটেজ বুকিং রয়েছে।

রাঙ্গামাটি পর্যটন ও হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক অলোক বিকাশ চাকমা জানান, ডিসেম্বর মাস হচ্ছে পর্যটকের ভরা মৌসুম। টানা তিনদিনে ছুটিতে আমাদের কমপ্লেক্সের সকল রুম একশত শতাংশ বুকিং রয়েছে এবং ঝুলন্ত সেতুতেও আশানুরূপ পর্যটকের আগমন ঘটেছে। আশাকরি,এই আগমন আগামী জানুয়ারি মাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে এবং এই মৌসুমে রের্কড পরিমাণ আয় হবে।

তিনি আরো জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঝুলন্ত সেতু এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি সিসি ক্যামেরা সহ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।

রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা জানান, আরএইচডি লেক ভিউ গার্ডেন সাধারণত জনসাধারণের জন্য নির্মিত হয়েছে। প্রতিদিনই এই গার্ডেনে পর্যটকরা ভিড় করে। এছাড়াও সরকারি ছুটিতেও পর্যটকের প্রচুর সমাগম ঘটে।