Image description

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে শরীয়তপুর-১ (সদর ও জাজিরা) আসনে রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে উঠেছে। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দলটির অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন রাজপথে গড়িয়েছে। মনোনয়ন নিয়ে সৃষ্ট এই অস্থিরতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভোটের মাঠে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে শুরু করেছে অন্যান্য দল।

দলীয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুর-১ আসনে সাঈদ আহমেদ আসলামকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করার পর থেকেই স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়া সত্ত্বেও আসলামকে ‘অ-স্থানীয়’ ও ‘তৃণমূলের কাছে অগ্রহণযোগ্য’ হিসেবে দাবি করছেন দলটির একাংশ। বিশেষ করে সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন কালুকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর অনুসারীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন।

বিগত কয়েক দিন ধরে নাসির উদ্দিন কালু সমর্থিত নেতাকর্মীরা মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, মশাল মিছিল ও টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করে আসছেন। তাদের দাবি, দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতাকে বাদ দিয়ে বাইরে থেকে প্রার্থী চাপিয়ে দেওয়া তৃণমূলের সঙ্গে চরম অবিচার।

শরীয়তপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আলী আজম সরদার বলেন, “শরীয়তপুর-১ আসনে স্থানীয় ও ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে অন্য এলাকা থেকে প্রার্থী আনা হয়েছে। এটা আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”

সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল ছৈয়াল বলেন, “সাঈদ আহমেদ জেলা পর্যায়ের নেতা হলেও তিনি এই আসনের বাসিন্দা নন। এতে কর্মীদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।”

এক প্রবীণ ভোটার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “নিজেদের মধ্যে ঐক্য না থাকলে ভোটে জয় আসবে কীভাবে? আমরা সাধারণ মানুষ বুঝতেই পারছি না কাকে সমর্থন করব।” বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সুযোগে মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

জামায়াতে ইসলামী এ আসনে প্রার্থী করেছে ড. মোশাররফ হোসেন মাসুদকে, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী তোফায়েল আহমেদ কাসেমী। তারা নিয়মিত গ্রামভিত্তিক গণসংযোগ চালাচ্ছেন।

জামায়াত নেতা ইঞ্জিনিয়ার লোকমান হোসাইন বলেন, “দেশে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসে মানুষ অতিষ্ঠ। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে ইনশাআল্লাহ ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা হবে। মানুষ এখন বিকল্প খুঁজছে।”

শরীয়তপুর সদর উপজেলার পালং এলাকার ভোটার শহি মাদবর বলেন, “আমরা দল নয়, মানুষ দেখি। যে এলাকার উন্নয়ন করবে তাকেই ভোট দেব। কিন্তু দলগুলোর ভেতরের দ্বন্দ্ব আমাদের বিভ্রান্ত করছে।”

জাজিরা উপজেলার তরুণ ভোটার পলাশ খান বলেন, “আগে ভাবতাম বিএনপিই একমাত্র বিকল্প। এখন তাদের অবস্থাই পরিষ্কার না। তাই নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।”

শরীয়তপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তোয়াব হোসেন বলেন, “বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৃণমূল উপেক্ষিত হলে তার প্রতিক্রিয়া অনিবার্য। শরীয়তপুর-১ আসনে বিএনপির বিভক্তি অব্যাহত থাকলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো।”

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) শরীয়তপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমরা দল নয়, যোগ্য প্রার্থী চাই। যিনি সুশাসন, জবাবদিহি ও আইনের শাসন নিশ্চিত করবেন- ভোটারদের উচিত তাকেই বেছে নেওয়া।”

সব মিলিয়ে শরীয়তপুর-১ আসনে নির্বাচনী মাঠ ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব যত দীর্ঘায়িত হবে, ততই শক্ত অবস্থান গড়ে তুলবে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো। শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে কারা টিকে থাকবেন, সেটিই এখন দেখার বিষয়।