পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ঐতিহ্যবাহী চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার ও সংলগ্ন ব্যাঙছড়ি মুসলিম পাড়া এলাকা। দীর্ঘদিনের পাহাড়ি-বাঙালি ভ্রাতৃত্বকে আরও সুদৃঢ় করতে উভয় সম্প্রদায়ের সম্মতিতে বিহারের প্রধান তোরণ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় কাপ্তাই সড়ক সংলগ্ন চিৎমরম বড় কিয়ং ঘাটে এই শতবর্ষী বিহারের তোরণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। বিহারের পূজনীয় ভিক্ষু সংঘ মঙ্গল সূত্র পাঠের মাধ্যমে নির্মাণের শুভ সূচনা করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, চিৎমরম বৌদ্ধ বিহারের প্রস্তাবিত প্রধান তোরণটির অতি সন্নিকটেই ব্যাঙছড়ি মুসলিম পাড়া বায়তুল জামে মসজিদ অবস্থিত। ধর্মীয় স্থাপনা নিয়ে অনেক সময় নানা জটিলতা দেখা দিলেও এখানে দুই ধর্মের মানুষ একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। দীর্ঘ সময় ধরে আজানের ধ্বনি আর বিহারের শান্ত পরিবেশ এখানে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। তোরণ নির্মাণে মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন এলাকায় সাম্প্রদায়িক স্থিতিশীলতার এক নতুন বার্তা দিচ্ছে।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে স্থানীয় সমাজসেবক মো. জসিম উদ্দিন ও মসজিদ কমিটির প্রতিনিধি মো. সাত্তার বলেন, "আমরা বছরের পর বছর ধরে এখানে ভাই-ভাই হিসেবে বসবাস করছি। বৌদ্ধ বিহারের গেইট হওয়া মানে আমাদের এলাকারই উন্নয়ন। আমাদের মাঝে কোনো বিভেদ নেই, আমরা এই মহৎ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।"
বিহার পরিচালনা কমিটির সদস্যরা জানান, বাঙালি প্রতিবেশীদের এই স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন আনন্দের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। এই তোরণটি কেবল বিহারের প্রবেশপথ নয়, বরং এটি হবে অত্র অঞ্চলের সম্প্রীতির প্রতীক।
ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কাপ্তাই উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক উথোয়াইমং মারমা, সমাজসেবক মংসুইপ্রু মারমা, ক্যওজমং চৌধুরী, পাইসুই উ মারমা, মংসুইউ মারমা প্রমুখ। মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন জসিম উদ্দিন, আব্দুল সাত্তার, মো. নিজাম উদ্দিন, আমান উল্লা মানিক ও আব্দুর রশিদ।
উপস্থিত নেতৃবৃন্দ জানান, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল স্তরের মানুষ এই নির্মাণ কাজে সহযোগিতা করছেন। তোরণটি এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যেন তা রাস্তার যানচলাচল বা মসজিদের প্রবেশপথে কোনো বিঘ্ন না ঘটায়।
উল্লেখ্য, ১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ বিহারটি দীর্ঘ ১০০ বছর ধরে পাহাড়ে শান্তি ও ধর্মীয় অনুশাসন প্রচার করে আসছে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই সম্প্রীতির উদ্যোগ পাহাড়ের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় সুদূরপ্রসারী ভূমিকা পালন করবে




Comments