
বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে ইসলামী ধারার পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করে একটি ব্রিজ ব্যাংকে রূপান্তরিত করা হচ্ছে, যা সরকারি মালিকানায় পরিচালিত হবে। ব্যাংকগুলো হলো- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংক। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনার আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে সরকারি ব্যাংকগুলোর অতীত অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান আর্থিক অবস্থা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে।
ব্যাংকগুলোর পটভূমি ও অনিয়মের অভিযোগ
একীভূত হতে যাওয়া পাঁচটি ব্যাংকের মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। অপরদিকে, এক্সিম ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করতো নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার। এই গ্রুপগুলোর সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, এই ব্যাংকগুলো থেকে নানা অনিয়মের মাধ্যমে ঋণের নামে আমানতকারীদের অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে, যার বড় অংশ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। এসব ঋণ এখন আর আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না।
সরকারি মালিকানার প্রত্যাশা ও চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই পাঁচটি দুর্বল ব্যাংক একীভূত হয়ে একটি ব্রিজ ব্যাংকে রূপান্তরিত হবে, যা সরকারি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “এই ব্যাংকগুলো যখন রাষ্ট্রের মালিকানায় আসবে, তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি বিশ্বাস তৈরি হবে যে তাদের আমানত সুরক্ষিত। এতে গ্রাহকদের আস্থা ফিরে আসবে।”
তবে সরকারি ব্যাংকগুলোর অতীত অভিজ্ঞতা এই আশাবাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট খেলাপি ঋণের অর্ধেকই রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর। অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার বলেন, “সরকারি ব্যাংকগুলোর অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। তাই নতুন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় কতটুকু সফলতা আসবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে আমি প্রাইভেটাইজেশনের পক্ষে। তবে শুধু মালিকানা পরিবর্তন করে সমাধান হবে না। বোর্ড ও ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করতে হবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধান জোরদার করতে হবে।”
পরবর্তী পদক্ষেপ
আগামী সপ্তাহে এই পাঁচ ব্যাংকের জন্য প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে। তারা একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার কাজ শুরু করবেন। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং গ্রাহকদের আস্থা পুনরুদ্ধার করাই মূল লক্ষ্য। তবে সরকারি ব্যাংকগুলোর বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ এবং খেলাপি ঋণের বিশাল বোঝা এই লক্ষ্য অর্জনের পথে প্রধান বাধা হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দাবি, রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টির কারণে গ্রাহকদের আস্থা অটুট থাকবে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কেবল সরকারি মালিকানা নয়, ব্যাংকগুলোর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনাই হবে এই উদ্যোগের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
Comments