Image description

সবুজের স্নিগ্ধতায় ঘেরা বনগাঁও গ্রামে নীরবে দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের এক সাক্ষী— কামিনী ভবন। কেউ বলে জমিদারবাড়ি, কেউ বা বলে ভুতুড়ে প্রাসাদ। তবে যারা জানেন, তারা বলেন— এটি শুধু ইট-পাথরের স্থাপনা নয়, এটি এক সময়ের ঐশ্বর্য, সংস্কৃতি আর মানবিকতার স্মৃতিফলক।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে, আনুমানিক ১৬৭৫ খ্রিষ্টাব্দে শ্রীমঙ্গলের বালিশিরা পরগণার প্রভাবশালী জমিদার কুঞ্জ বিহারি সেন এই ভবনটি নির্মাণ করেন। প্রাসাদের বারান্দায় বসেই তিনি নাকি দরিদ্রদের সহায়তা করতেন, আয়োজন করতেন যাত্রা-নাটকের, এমনকি চিকিৎসাসেবাও দিতেন এলাকাবাসীকে।

দালানটির নাম রাখা হয়েছিল তাঁরই নামে— কামিনী ভবন। তখন বনগাঁও ছিল জমিদারদের রাজত্ব। উৎসবের সময় এই বাড়িতেই বসতো পূজার আসর, গান-বাজনার উৎসব, আর নাট্যচর্চার আয়োজন। বাড়ির একপাশে ছিল গোয়ালঘর, অন্য পাশে অতিথিশালা। ভেতরে ছিল রাজকীয় পালঙ্কঘর, নকশা করা কাঠের জানালা, আর মোটা দালানের দেয়ালে দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ।

কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে সেই দিনগুলো। স্বাধীনতার পর প্রজন্ম পাল্টেছে, জমিদার প্রথা বিলুপ্ত হয়েছে, কিন্তু ভবনটি রয়ে গেছে সময়ের সাক্ষী হয়ে। এখন এটি নিঃশব্দ, নির্জন। ছাদের প্লাস্টার ঝরে পড়ে, দরজা-জানালায় শ্যাওলা জন্মেছে, কোথাও কোথাও গাছের শিকড় দেয়াল ভেদ করে বেরিয়েছে। 

এক সময় এই বাড়ির পাশে হতো পল্লীগীতির আসর। পূর্ণিমার রাতে জমিদারবাড়ির উঠানে আলোর ঝলকানি দেখা যেতো। এখন সেখানে কেবল ঝিরঝিরে বাতাস আর স্মৃতির গন্ধ। কালের ধুলোয় হারিয়ে যাওয়া বালিশিরা পরগনার বনগাঁওয়ের জমিদারবাড়িটি এখন ভুতুরে বাড়ি। জমিদার কুঞ্জ বিহারী সেনের পরবর্তী প্রজন্মের কেউই এ বাড়িটিতে আর বসবাস করেন না। পরিবারের সদস্যদের অধিকাংশই বর্তমানে স্থায়ীভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা। 

ইতিহাসের গর্ব ছিল যে স্থাপনা, আজ তা বিলীন হওয়ার অপেক্ষায়। সংস্কারের অভাবে প্রতিদিন একটু একটু করে মুছে যাচ্ছে তার অস্তিত্ব। তবু আশার কথা— এখনো কেউ কেউ চান এই প্রাচীন স্থাপনাটি সংরক্ষণ হোক, যেন আগামী প্রজন্ম জানতে পারে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের জমিদারি ঐতিহ্যের এক অনন্য অধ্যায়।