পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহকে সূর্যের টানে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচিয়েছে বৃহস্পতি
সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতি তার জন্মলগ্নে এমন এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল, যা পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহকে সূর্যের টানে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছিল। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের এই গবেষণালব্ধ ফল গত ২২ অক্টোবর ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, সৌরজগতের প্রাথমিক ধাপে বৃহস্পতি যখন দ্রুত আকারে বড় হচ্ছিল, তখন সূর্যকে ঘিরে থাকা গ্যাস ও ধূলিকণার স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়। এর ফলস্বরূপ, পৃথিবী, শুক্র ও মঙ্গলের মতো অভ্যন্তরীণ গ্রহ গঠনের মূল উপাদানগুলো সূর্যের তীব্র আকর্ষণে বিলীন হওয়া থেকে সুরক্ষিত থাকে।
গবেষক দলের সহলেখক অধ্যাপক আন্দ্রে ইজিদোরো জানান, বৃহস্পতির শক্তিশালী অভিকর্ষ শুধু অভ্যন্তরীণ গ্রহগুলোর কক্ষপথ স্থিতিশীল রাখেনি, বরং এটি পুরো সৌরজগতের কাঠামোকেই প্রভাবিত করেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, "বৃহস্পতি যদি না থাকত, তবে পৃথিবী হয়তো আজ আমাদের পরিচিত রূপে টিকে থাকতো না।"
কম্পিউটার সিমুলেশনের মাধ্যমে গবেষক দলটি বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে যে বৃহস্পতির দ্রুত আকার বৃদ্ধি সূর্যকে প্রদক্ষিণকারী গ্যাস ও ধূলিকণার স্তরে এক ধরনের ঢেউ সৃষ্টি করে। এর ফলে সেখানে আংটির মতো ঘন বৃত্ত তৈরি হয়, যা অনেকটা ‘মহাজাগতিক যানজট’-এর মতো কাজ করে। এই ঘন স্তরগুলোতে ধূলিকণা আটকে যায় এবং সূর্যের অভ্যন্তরে পতিত না হয়ে ধীরে ধীরে গ্রহ গঠনের উপাদানে পরিণত হয়।
বৃহস্পতির এই বিকাশের কারণে সৌরজগতে একটি প্রশস্ত ফাঁকের সৃষ্টি হয়, যা এটিকে অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগতঅংশে স্পষ্টভাবে বিভক্ত করে দেয়। এই বিভাজন এক অংশের উপাদানকে অন্য অংশের সঙ্গে মিশে যেতে বাধা দেয়। এর প্রমাণ হিসেবে, বিজ্ঞানীরা আজও প্রাপ্ত উল্কাপিণ্ডগুলোতে সৌরজগতের ভেতরের ও বাইরের অংশের ভিন্ন ভিন্ন রাসায়নিক গঠন লক্ষ্য করেন।
গবেষকরা আরও বলেন, বৃহস্পতির সৃষ্টি ও বিকাশের মাধ্যমেই মূলত সৌরজগতের গ্যাস ও ধূলিকণার প্রবাহ নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল, যা নতুন গ্রহ ও উল্কাপিণ্ড তৈরির পথ খুলে দেয়। তাদের গবেষণায় পাওয়া এই ‘আংটি’ ও ‘ফাঁকের’ কাঠামোটি চিলির আটাকামা টেলিস্কোপ দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা অন্যান্য নবীন নক্ষত্রমণ্ডলীতেও দেখা গেছে, যা এই তত্ত্বের সত্যতা প্রমাণ করে।




Comments