অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে ৩ দলের প্রশ্ন, অপসারণের দাবি
অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এই তিন দল নির্বাচনের আগেই বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
গত মঙ্গল ও বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করে দলগুলো সুনির্দিষ্ট কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করে। মঙ্গলবার প্রথমে বিএনপি সুনির্দিষ্ট কয়েকজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। পরদিন বুধবার জামায়াতে ইসলামী এবং এরপর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতারাও তাদের অভিযোগ জানান।
যদিও সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে দলগুলোর প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকদিন আগে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেছিলেন, যেহেতু বড় সব দলই অভিযোগ করছে, ফলে সরকার ঠিক পথেই আছে বলে তিনি মনে করেন।
তবে, বিতর্কিত উপদেষ্টা কারা এবং কেন দলগুলো এমন অভিযোগ তুলছে—এসব প্রশ্ন এখন আলোচনার কেন্দ্রে। বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির নেতারা দীর্ঘদিন ধরেই কিছু উপদেষ্টার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করে আসছেন।
বিএনপির অভিযোগ, কিছু উপদেষ্টা একটি বিশেষ দলের (জামায়াতে ইসলামী) পক্ষে কাজ করছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন। বৈঠকে তারা অভিযোগ করেন যে, প্রশাসনে ও পুলিশে বদলি-পদায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে কাজ করছেন ওই উপদেষ্টারা।
প্রশাসনে রদবদল বা পদায়নের জন্য গঠিত জনপ্রশাসন সম্পর্কিত কেবিনেট কমিটি নিয়েও বিএনপির আপত্তি রয়েছে। এই কমিটিতে চারজন উপদেষ্টা, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব রয়েছেন। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, এই কমিটি নিয়েই তাদের আপত্তি।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক বিএনপি নেতা জানিয়েছেন, তাদের বিতর্কিতদের তালিকায় এক নম্বরে রয়েছেন জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, যিনি প্রশাসনে রদবদলের কেবিনেট কমিটিতে আছেন। এই কমিটির আরেক সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব শেখ আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধেও একটি বিশেষ দলের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ জানিয়েছে বিএনপি।
এছাড়াও, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী, যিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার পরই তার অবস্থানে আছেন, তার বিরুদ্ধেও একটি দলের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। কোনো কোনো উপদেষ্টা রাজনীতি বা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত আছেন, এমন অভিযোগও বিএনপি উত্থাপন করেছে। এক্ষেত্রে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে সরকারের থাকা উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার দিকে আঙুল তুলেছে বিএনপি।
দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব ও কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের যেন সরকার থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, এই আবেদনও তারা প্রধান উপদেষ্টার কাছে জানিয়েছেন।
বিএনপির পর জামায়াতের নেতারা গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন। বৈঠকে জামায়াত নেতারা কয়েকজন উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও, সুনির্দিষ্টভাবে কারও নাম উল্লেখ করেননি। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ একজন সচিবসহ কয়েকজন আমলার নিরপেক্ষতা নিয়ে জামায়াতের প্রশ্ন রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা নিজের তত্ত্বাবধানে প্রশাসনে রদবদল করার আশ্বাস দিলেও উপদেষ্টা পরিষদ পরিবর্তনের বিষয়ে কিছু বলেননি।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, তারা প্রধান উপদেষ্টার কাছে কোনো উপদেষ্টার নাম উল্লেখ করেননি।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, তারা তাদের অভিযোগের ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক করেছেন এবং প্রয়োজনে পরে তারা তাদের কাছে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের নাম প্রকাশ করবেন।
বুধবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, জনপ্রশাসনে বদলি-পদায়নে বড় দলগুলোর 'ভাগ-বাঁটোয়ারায়' উপদেষ্টা পরিষদের ভেতর থেকে সহায়তা করা হচ্ছে। তার এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, এনসিপিও প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করেছে।
বিএনপি, জামায়াতের পাশাপাশি এনসিপি নেতাদের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এই সাক্ষাতের পেছনে ভিন্ন কারণ ছিল বলেও দলটির একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এই সূত্রগুলো বলছে, সম্প্রতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি আলোচনায় আসায়, অন্তর্বর্তী সরকারের কাঠামোর কোনো পরিবর্তন হয় কি না, এ নিয়ে তাদের উদ্বেগ ছিল। মূলত এই উদ্বেগ নিয়েই তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন। এনসিপির সূত্রগুলো জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সংখ্যা বা কলেবর বাড়ুক কিংবা কমুক, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বেই নির্বাচন হবে, এ ব্যাপারে তাদের নিশ্চিত করা হয়েছে।


Comments