ডেঙ্গু কোনো নতুন রোগ নয়। প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিলেও এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয়নি। গত দেড় মাস ধরে দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। অবশ্য গত বছরের বিবেচনায় এ বছর ডেঙ্গুর সংক্রমণ কম হয়েছে। তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, গত বছরের তুলনায় এবার সংক্রমিত মানুষের মৃত্যুহার বেশি।
২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার ছিল শূন্য দশমিক ৫৫ শতাংশ, চলতি বছর মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ। মৃতের সংখ্যা ভয়াবহ আকার নিলেও কেমন যেন সব সহনীয় হয়ে গেছে। অন্যদিকে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিনে দিনে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি। ভয়াবহতার চিত্রটি বোঝা যায় হাসপাতালে গেলে। বৃষ্টিপাত না থাকলেও ডেঙ্গুর ভয়াবহতার ইতিবাচক কোন পরিবর্তন নেই। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছর একদিনে মৃত্যুর এ সংখ্যা সর্বোচ্চ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮৬ হাজার ৭৯১। আর মৃতের সংখ্যা ৪৫৯। এ নভেম্বরে ২৩ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ২৪,৯৭৪ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৪৪ জন। ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তার কেন ঘটছে, তা নির্ণয় করে প্রতিরোধের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ছে না।
এ বিষয়টি কেউ আমলে নিচ্ছেন না, যা দুঃখজনক। ঢাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনার কোনো প্রোগ্রাম চোখে পড়েনি। ফলে অযত্ন-অবহেলায় এখন ডেঙ্গু সব জায়গায় ছড়িয়ে গেছে। এখন শুধু জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসনের লোক কাজ করলে হবে না। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হলে প্রত্যেকটি মানুষকে সতর্ক হতে হবে। প্রত্যেকে যার যার ঘর পরিষ্কার রাখলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ হবে। বৃষ্টির সঙ্গে এডিস মশার প্রজননের যোগসূত্র রয়েছে। বর্ষা চলে গেলেও দেশের অনেক স্থানেই বৃষ্টি হচ্ছে।
এবার এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে দুশ্চিন্তার আরও কিছু জায়গা রয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও কার্যকর করা যায়নি। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের পরিবর্তে দায়িত্ব পাওয়া প্রশাসকরা আশার বাণী শোনাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজে গতি নেই। জনস্বাস্থ্যবিদরা আশঙ্কা করছেন, যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া না গেলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে। বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে আমলে নিতে হবে। আমাদের সেটা করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এখনও এ পদক্ষেপ না নিলে ডেঙ্গু মহামারি আকার নেবে তখন করার কিছুই থাকবে না।
অন্যদিকে, কিছু কিছু খাল রয়েছে সেগুলো যেন এক একটি মশা তৈরির কারখানায় পরিণত হয়েছে। তাই পরিবেশগত অব্যবস্থাপনার কারণে ডেঙ্গুর সম্মুখীন হচ্ছি আমরা। যদি পরিকল্পিত নগরায়ণ, নগরের জলাধার রক্ষা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা রোধ, প্রকৃতি রক্ষা, দূষণ রোধের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেয়া যায়; তবে অনেকাংশে কমে যাবে এসব সমস্যা।
বাংলাদেশে সাধারণত বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এ সময় বৃষ্টির পানি বাড়িঘর ও আঙিনায় জমে থাকে এবং সেখানে ডেঙ্গুর উৎস এডিস মশা জন্ম নেয়। এডিসের উৎপাত থাকবে বছরজুড়েই। কাজেই ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা পেতে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধের মূলমন্ত্রই হলো এডিস মশার বিস্তার রোধ। তাই যথাযথ কর্তৃপক্ষের কার্যকর ভূমিকার পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতায় সম্ভব ডেঙ্গু প্রতিরোধ। যেভাবেই হোক ডেঙ্গুর উৎস পুরোপুরি নির্মূল করতে হবে। আমরা এ বিষয়টিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানাই।
Comments