সড়কে শৃঙ্খলা ফিরছেই না- এমন সংবাদ নিয়মিত পড়তে হয়। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার কোনোভাবেই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পারছে না। বিগত সরকার বিশেষত সড়ক পথের উন্নয়ন দেশের সার্বিক চিত্রকে বদলে দিয়েছে। গহিন গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে পিচঢালা সড়ক। গ্রামের উঠোনে উটের গ্রীবার মতো গলা বাড়িয়ে দিয়েছে। রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন হয়নি। সড়কে যত্রতত্র দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা, ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিংয়ের দৌরাত্ম্যে ঘটছে প্রাণহানি।
গাড়িচাপা, মুখোমুখি সংঘর্ষ, এক গাড়িকে আরেক গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ ঝরছে হরহামেশা। কোনো নিয়ম না মেনে বেপরোয়া তিন চাকার অটো। আবার জেলার সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশাও চলে এসেছে রাজধানীতে। এসব বিষয়ে পুলিশ প্রশাসন, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ের অভাবকে দুষছেন নগরবিশেষজ্ঞরা। রাজধানীর বিজয় সরণি, ফার্মগেট, বাড্ডা, রামপুরা, বাংলামোটর, মগবাজার, কাকরাইল, কুড়িল বিশ্বরোডসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে দেখা গেছে, অনেক যানবাহন সিগন্যাল অমান্য করে চলাচল করছে। প্রবেশমুখগুলো বন্ধ করে অনিয়ন্ত্রিতভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে পাবলিক বাস, ব্যাটারিচালিত রিকশা, রিকশা ও ছোট যানবাহনগুলো। প্রধান সড়কের বিভিন্ন জায়গায় পার্ক করে রাখা হয়েছে বাস-ট্রাক-প্রাইভেট কার।
এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে চলছে খোঁড়াখুঁড়িও। কোনোভাবেই নিয়ম কেউ মানছে না। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের তথ্যানুযায়ী রাজধানীতে বাস চলাচল করছে ৪২ হাজার ৩৭৮টি। আর সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলছে ২০ হাজার ৮৯৩টি। সারাদেশের সড়কে কোনো গাড়ি সর্বোচ্চ কত গতিতে চলতে পারবে, তা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু একই সড়কে বিভিন্ন ধরনের গাড়িকে ভিন্ন গতিতে চলতে বলা হয়েছে। লেনভিত্তিক গতি আলাদা করা হয়নি। ফলে সড়কে এখনও ফেরেনি শৃঙ্খলা। খেয়াল-খুশিমতো চলছে গাড়ি, বেপরোয়া ব্যাটারিচালিত রিকশা। রাজধানী ঢাকার ফ্লাইওভারগুলোতে এখন দিন-দুপুরেই ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যানগাড়ি চলছে। আগে অলিগলিতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চললেও এখন কোনোকিছু তোয়াক্কা না করেই মূল সড়কে যাত্রী বহন করছে তারা। মোড়ে মোড়ে মোটরসাইকেল চালকরা যাত্রী তুলতে জটলা করছেন।
বাসচালকরা আগের মতোই বাসস্ট্যান্ডগুলোতে যাত্রী তোলা ও নামিয়ে দেয়ার পরিবর্তে যখন তখন রাস্তার মাঝেই যাত্রী নামাচ্ছে ও উঠাচ্ছে। যানবাহনগুলোর গতিও বিপজ্জনক। শহরজুড়ে বিশৃঙ্খলায় বিরক্ত যাত্রীরা। কিন্তু যে ট্রাফিক পুলিশের সড়কের এ বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনার কথা ছিল- তাদেরও আগের মতো দায়িত্ব পালন করতে দেখা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন যোগাযোগ ও সড়ক বিশেষজ্ঞরা। ফলে একদিকে যেমন দুর্ঘটনা ঘটছে, অন্যদিকে শহরে আগের তুলনায় বেড়েছে যানজট। এ অবস্থায়, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এখন সড়কে ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এতে সড়কে শৃঙ্খলা না ফিরে বরং গতির ভিন্নতার কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সড়কে যানের গতি কমিয়ে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব হবে না। দুর্ঘটনা কমাতে সড়কে শৃঙ্খলা দরকার। শুধু যানের গতি কমলে শৃঙ্খলা কমে আসার কোনো সুযোগ নেই। সড়কে নৈরাজ্যের বিষয়টি বহুল আলোচিত। বস্তুত রাজধানীসহ দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোয় যানবাহন চলাচলে কোনো শৃঙ্খলা না থাকার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটে। দেশে সড়কে আইন মানার প্রবণতা নেই বললেই চলে। সড়কজুড়ে বিরাজ করছে চরম বিশৃঙ্খলা। পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলার মূল কারণ সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের অদক্ষতা ও পেশাদারি মনোভাবের অভাব। এসব দিকে দৃষ্টি দিলে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ কোনো অসম্ভব কাজ নয়।
এজন্য দরকার সরকার ও জনগণের ইতিবাচক চিন্তা এবং সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথোপযুক্ত বাস্তবায়ন। পাশাপাশি জনগণকেও ট্রাফিক আইন ও রাস্তায় নিরাপদে চলাচলের লক্ষ্যে প্রণীত আইন-কানুন যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এবং শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনকেও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে- এ প্রত্যাশা দেশবাসীর।
Comments