Image description

প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের তৃতীয় রোববার যুক্তরাষ্ট্রে পালিত হয় স্ত্রীর প্রশংসা দিবস (Wife Appreciation Day)। ২০০৬ সালে প্রথম সূচনা হওয়ার পর থেকে এই দিবস ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছে নানা দেশে। উদ্দেশ্য একটাই—একজন স্ত্রীর অবদানকে সম্মান জানানো, তার ভালোবাসা, পরিশ্রম, ত্যাগ আর সাহসকে স্বীকৃতি দেওয়া।

আমাদের সমাজে প্রায়শই দেখা যায়, স্ত্রীর শ্রম ও অবদান স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়। ঘর-সংসার, সন্তান, অফিস—সবকিছু সামলাতে গিয়ে স্ত্রী যে ক্লান্ত হয়, যে লড়াই করে—তা আমরা অনেক সময় অবহেলা করি। অথচ সংসারের চালিকাশক্তি তিনি। কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাই লিখেছিলেন: “বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।”

সংসার সুখের হয় কেবল নারীর গুণে—এমন ধারণা অতীতে ছিল। আজ মানুষ বিশ্বাস করে, সংসার সুখের হয় স্বামী-স্ত্রী দুজনের পরিশ্রমে, দুজনের সমান ত্যাগে।

স্ত্রী আসলে কী?
স্ত্রী কেবল একজন সঙ্গী নন, তিনি জীবনের অবলম্বন। একসঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়া, প্রতিদিনের জীবনে সাহস জোগানো, স্বপ্ন দেখার মতো শক্তি দেওয়া—এসবই আসে স্ত্রীর কাছ থেকে।

আমার নিজের জীবনের উদাহরণ ধরুন। আমি শিক্ষক ও সাংবাদিক। সংসারের চাপ, পেশার ব্যস্ততা, মাঠের কাজ, লেখা—সব মিলে অনেক সময় মানসিক চাপ তৈরি হয়। কিন্তু পাশে আছেন আমার স্ত্রী আঞ্জুমানারা লতা—একজন শিক্ষানবিশ আইনজীবী। তিনি শুধু সংসারের দায়িত্বই সামলান না, আমার মানসিক ভরসাও হয়ে দাঁড়ান। তার দৃঢ়তা আমাকে প্রতিদিন নতুন করে অনুপ্রাণিত করে।

আমি জানি, বাংলাদেশের হাজারো স্বামী তাদের স্ত্রীদের বিষয়ে একই কথা বলতে পারেন। কিন্তু কয়জন খোলাখুলি প্রশংসা করেন? আজকের এই দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়—প্রশংসা করা কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং প্রয়োজন।

কেন স্ত্রীর প্রশংসা জরুরি?
প্রশংসা মানেই শুধু ফুল দেওয়া বা নতুন পোশাক উপহার দেওয়া নয়। প্রশংসা মানে হলো—তার গুরুত্ব স্বীকার করা। তাকে জানানো যে তিনি সংসারের মূল শক্তি।
আপনার স্ত্রী হয়তো দিনে ১০ বার রান্নাঘরে যান, সন্তানদের পড়াশোনা দেখেন, আপনাকে উৎসাহ দেন, আবার নিজের কর্মক্ষেত্রেও লড়াই চালিয়ে যান। এই পরিশ্রম যদি আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্বীকার করি, তাহলে তিনি বুঝতে পারবেন—তিনি কতটা মূল্যবান।

সমাজে স্ত্রীদের অবদান:
আমাদের সমাজে অসংখ্য নারী সংসার চালানোর পাশাপাশি কর্মজীবনে সক্রিয়। তারা শিক্ষক, ডাক্তার, আইনজীবী, প্রকৌশলী, সাংবাদিক কিংবা শ্রমজীবী—প্রত্যেকেই লড়াই করছেন পরিবার ও সমাজের জন্য। অথচ খুব কম দিনই তাদের জন্য আলাদা করে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

স্ত্রীর প্রশংসা দিবস তাই কেবল ব্যক্তিগত নয়, সামাজিক বার্তাও বহন করে। এটি আমাদের শেখায়—যারা প্রতিদিন নিঃশব্দে ত্যাগ স্বীকার করছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া জরুরি।

কীভাবে উদযাপন করা যায়?
স্ত্রীর প্রশংসা দিবস কোনো বিলাসী আয়োজনের দাবি রাখে না। একটি ফুলের তোড়া, একটি মিষ্টি হাসি, কয়েকটি কৃতজ্ঞতার শব্দই যথেষ্ট। তাকে কোনো রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাওয়া যায়, কিংবা বাড়িতেই ছোট্ট একটি আয়োজন করা যায়। আসল বিষয় হলো হৃদয়ের গভীর থেকে বলা— “তুমি আছো বলেই আমার জীবন পূর্ণ।”

আজকের দিনে আমরা, স্বামী হিসেবে, নিজেদের প্রশ্ন করতে পারি—শেষ কবে স্ত্রীকে বলেছিলাম, “তুমি অনেক কিছু করছো, ধন্যবাদ”? যদি মনে করতে কষ্ট হয়, তবে বুঝতে হবে—প্রশংসা করা এখন আগের চেয়ে বেশি দরকার।

স্ত্রীর প্রশংসা দিবস শুধু একটি তারিখ নয়, এটি স্মরণ করিয়ে দেয়—ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা আর সম্মান প্রকাশের মাধ্যমেই সংসার শক্ত হয়।

আমার কাছে তাই স্ত্রী আঞ্জুমানারা লতার জন্য আজকের সবচেয়ে বড় বার্তা হলো:
“তুমি আমার জীবনসঙ্গী নও শুধু, তুমি আমার সাহস, তুমি আমার অনুপ্রেরণা। তোমার ত্যাগ আর ভালোবাসার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ।”

লেখক:
সাংবাদিক ও শিক্ষক