Image description

পাহাড়, নদী আর অবিচ্ছিন্ন ১২০ কিলোমিটার বালুকাবেলার অপূর্ব সমন্বয়ে গড়ে ওঠা কক্সবাজারকে বলা হয় বাংলাদেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র। প্রতিদিন হাজারো মানুষ ছুটে আসেন যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি ভুলতে। তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে সাগরে স্নান, সৈকতে হাঁটা বা হিমছড়ি-ইনানী ভ্রমণ ছাড়া আধুনিক পর্যটকদের জন্য এখানে আর কী সুযোগ রয়েছে?

এই প্রশ্নকে সামনে রেখেই আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব পর্যটন দিবস। পর্যটক, স্থানীয় ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কক্সবাজারে বহুমাত্রিক বিনোদনের সুযোগ নেই। নেই আন্তর্জাতিক মানের থিম পার্ক, অ্যামিউজমেন্ট জোন কিংবা রাতের বেলায় পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো কোনো বৈচিত্র্যময় আয়োজন। ফলে সমুদ্রের অপরূপ সৌন্দর্য ঘিরেই কক্সবাজার সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে।

শুক্রবার ছুটির দিনে সুগন্ধা, লাবণী, কলাতলী, শৈবাল পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে হাজারো পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়। কেউ সাগরে সাঁতার কাটছেন, কেউ বিচ বাইক, জেটস্কি বা ঘোড়ার পিঠে চড়ে আনন্দ নিচ্ছেন। ভ্রমণসঙ্গী ও পরিবারের সঙ্গে মেতে উঠেছেন ফটোসেশনে। কিন্তু দিন শেষ হতেই বিনোদনের সীমাবদ্ধতা প্রকট হয়ে ওঠে।
 
গাজীপুর থেকে আসা পর্যটক ইকবাল বলেন, ‘সাগর উত্তাল থাকলেও মজা পাচ্ছি। কিন্তু সাগরের বাইরে আর কিছু নেই। রাত নামলেই হোটেল রুমে বন্দি থাকতে হয়। এখানে আধুনিক রাত্রিকালীন বিনোদনের ব্যবস্থা থাকা দরকার।’
 
পর্যটকদের বড় আক্ষেপ, একঘেয়ে অভিজ্ঞতার কারণে কক্সবাজারে বারবার এলেও নতুন আনন্দ খুঁজে পান না তারা।
 
তাদের অভিযোগ, ব্যক্তিগত বিনিয়োগে বহুমুখী প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও প্রশাসনিক জটিলতা, অনুমোদনের দেরি ও অব্যবস্থাপনায় তা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ব্যক্তিখাতের আগ্রহও কমে যাচ্ছে।
 
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও কক্সবাজার কেবল সৈকত ও সাগরনির্ভর। বহুমুখী সুযোগ-সুবিধা গড়ে তুলতে পারলেই এটি আন্তর্জাতিক মানের বিনোদন নগরীতে রূপ নেবে।’

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শহীদুল আলম বলেন, ‘কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র করতে নানা উদ্যোগ ও পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন সর্বদা তৎপর।’

বিশ্ব পর্যটন দিবসের দিনে কক্সবাজারে বড় কোনো আয়োজন নেই। অন্যান্য বছরের মতো পর্যটন মেলা বা বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে এ বছর কেবল একটি র‍্যালি ও আলোচনা সভার মাধ্যমে দিবস পালন সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে।
 
এদিকে, নভেম্বর থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন মৌসুম শুরু হচ্ছে, যা চলবে আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। পর্যটকরা সেখানে সীমিত সময়ের জন্য ভ্রমণের সুযোগ পাবেন।
 
সার্বিকভাবে বলা যায়, কক্সবাজারের পর্যটন সম্ভাবনা অপরিসীম হলেও পরিকল্পনার অভাব, অব্যবস্থাপনা এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ঘাটতিতে পর্যটন শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটছে না।