চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস; দালালমুক্ত পরিবেশে সন্তুষ্ট সেবা গ্রহীতারা

চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সামনে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে সতর্কবাণীতে ভরা ব্যানার, ফেস্টুন ও খোদাই করা লেখা। দেয়ালে স্পষ্ট বার্তা “দালালের খপ্পরে পড়বেন না। দালাল ছাড়া নিজে আসুন। আপনার সেবার দায়িত্ব আমাদের।” মূল ফটকের ওপর ঝুলে থাকা বার্তায় লেখা “মূল এনআইডি, জন্মসনদ ও নাগরিক সনদ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক।” এসব সতর্কবার্তা সাধারণ জনগণকে সচেতন করতে এবং দালালচক্র থেকে বিরত রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
মূল গেটের ভেতরে পা রাখতেই দায়িত্বপ্রাপ্ত আনসার সদস্যরা আগতদের কারণ জিজ্ঞেস করেন। শুধু আবেদনকারী বা সেবা প্রত্যাশীদেরই প্রবেশের অনুমতি মিলছে। প্রতিটি রুমে কী ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে, তাও আন্তরিকতার সাথে জানিয়ে দিচ্ছেন আনসার সদস্যরা। লক্ষ্য একটাই অযথা কাউকে হয়রানি বা প্রতারণার সুযোগ না দেওয়া।
সেবাগ্রহণের কাউন্টারেও একই রকম শৃঙ্খলা ও সহানুভূতির চিত্র। সেবা প্রত্যাশীদের সহযোগিতায় সর্বদা প্রস্তুত দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যরা।
চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সেবার এই দৃশ্যপট পুরোপুরি বদলে গেছে উপ-পরিচালক এস.এম. জাকির হোসেন এর যোগদানের পর থেকে। অভিযোগ আর হয়রানির সেই পুরোনো চিত্র এখন ইতিহাস। প্রতিদিন গড়ে ১৫০-২০০ ই-পাসপোর্ট আবেদন জমা পড়ছে এবং ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে গড়ে ১০০-১৫০টি পাসপোর্ট।
সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে আবেদনকারীরা এখন সহজেই অনলাইনে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারছেন। এসএমএস ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদনের হালনাগাদ তথ্য জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি পুলিশ ভেরিফিকেশনের মতো সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়াও এখন অনেক সহজ ও কম জটিল।
সেবাকে আরও সহজ ও মানবিক করতে চালু করা হয়েছে হেল্প ডেস্ক, মোবাইল এনরোলমেন্ট ইউনিট, এবং বয়স্ক ও অসুস্থদের জন্য বিশেষ সহায়তা ইউনিট। প্রতিদিন পরিচালিত হচ্ছে গণশুনানি, যেখানে সাধারণ নাগরিকরা সরাসরি উপ-পরিচালকের কাছে অভিযোগ বা সমস্যা জানাতে পারছেন। ফলে অনেক সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান পাওয়া যাচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার রবিউল ইসলাম, দামুড়হুদার মুকুল হোসেন ও স্থানীয় মো. কালাম হোসেন জানান, সময়মতো পাসপোর্ট পেয়ে তাঁরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট। ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবাদে অনেক ভোগান্তি কমেছে। তারা অফিসের অন্যান্য কর্মচারীদের আরও আন্তরিক হবার পরামর্শও দিয়েছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী হাসান আলী জানান, এখন আর দালালের কাছে যেতে হয় না, নেই বাড়তি খরচ কিংবা হয়রানি। অফিসের এমন পরিবর্তন অভিজ্ঞ ও সাহসী নেতৃত্ব ছাড়া সম্ভব ছিল না বলেই মনে করেন তিনি।
চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক এস.এম. জাকির হোসেন বলেন, “বর্তমানে আমরা সেবার দিক থেকে দেশের প্রথম সারিতে আছি। অফিসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর আন্তরিক সহযোগিতায় এটি সম্ভব হয়েছে। আমি চাই, কেউ যেন কোনো হয়রানির শিকার না হয়। আমার অফিসে ঢুকতে কোনো অনুমতির প্রয়োজন নেই। যে কেউ সরাসরি আমার সঙ্গে দেখা করে সমস্যার সমাধান পেতে পারেন। দালালের কাছে না গিয়ে সরাসরি অফিসে আসুন, সেবা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।”
এ ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা অব্যাহত থাকলে, ভবিষ্যতে এই অফিস হবে দেশের উদাহরণযোগ্য সেবাকেন্দ্র হবে জানায় চুয়াডাঙ্গার সুশীল সমাজ।
Comments