Image description

গোধূলির সময় আকাশ যখন রঙিন আলোয় ভরে ওঠে, তখন বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহারহাটে চোখে পড়ে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। সুবিশাল সব কড়ই, শিমুল কাঁঠাল ও বটগাছসহ নাম না জানা অনেক গাছে শত শত শামুকখোল পাখি নীড়ে ফেরে কলতান তুলতে তুলতে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন পাখি নয়, হেলিপ্যাডে নেমে আসছে অসংখ্য হেলিকপ্টার। প্রকৃতির এই দৃশ্য শুধু চোখের প্রশান্তিই নয়, বরং জানান দেয় গ্রামীণ বাংলাদেশ এখনো পাখিদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় হয়ে আছে।

শামুকখোল সারশ জাতীয় বিরল প্রজাতির পাখি। এর দেহ সাদা ধূসর। লেজ ও ডানার প্রান্ত কালো। প্রায় ১৪ সেন্টিমিটার লম্বা ও ফাঁকাযুক্ত ঠোঁট এদের প্রধান বৈশিষ্ট্য। যা দিয়ে ছোট ছোট মাছ, শামুক, ঝিনুক ও পোকামাকড় ধরে খায়। দৈর্ঘ্যে প্রায় ৮১ সেন্টিমিটার, আর পাখার বিস্তার প্রায় দেড় ফুট।

বাংলাদেশের বড় আকারের জলচর পাখিদের মধ্যে শামুকখোল অন্যতম। দিনের শুরুতে খাদ্যের সন্ধানে ঝাঁক বেঁধে ওড়ে তারা। আবার বিকালের আলো ফুরাতে ফুরাতে ফিরতে থাকে নিজেদের নীড়ে।

শিবগঞ্জ উপজেলার বিহারহাট এলাকায় স্থানীয় মানুষেরা পাখিগুলোকে পরিবারের সদস্যদের মতোই আগলে রেখেছেন। কোনো শিকারীকে ঢুকতে দেওয়া হয়না এলাকায়। গ্রামবাসীর এই উদ্যোগেই প্রায় একদশক ধরে শামুকখোল এখানে নিশ্চিন্তে প্রজনন করছে। ফলে শামুকখোল পাখির সংখ্যাও বেড়েছে অনেক।

স্থানীয়রা জানান, ঐ এলাকায় বড় বড় গাছে সাইবেরিয়ার উত্তরাঞ্চল ও রাশিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে কিছু অতিথি পাখি এসে বাসা বাঁধে। যে পাখিকে বলা হয় শামুকখোল পাখি। পাখিগুলো আশেপাশের মাঠ, বিল, ডোবা ও পুকুর থেকে খাবার সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এলাকাবাসী তাদের যথেষ্ট নিরাপত্তা দিয়ে রাখে। চাইলেই কেউ শিকার করতে পারবে না।

স্থানীয়রা আরও জানান, বৈশাখ মাসে অতিথি পাখিগুলো বিহারহাট এলাকায় আসে। ডিম পাড়ে, বাচ্চা ফুটায়। তারপর বাচ্চারা উড়া শিখলে কার্তিক মাসের দিকে আবার বিদেশে চলে যায়। 

যখন উন্নয়নের চাপে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক পাখির আবাসস্থল, তখন শিবগঞ্জের বিহারহাট এক অনুকরণীয় উদাহরণ। ভোরের আলোয় শামুকখোলের ডানা ঝাপটানো কিংবা গোধূলির আভায় নীড়ে ফেরার দৃশ্য মনে করে দেয়, প্রকৃতি যদি ভালোবাসা পায়, তবে সে তার সৌন্দর্য উদার করে দেয়।

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জানান, পাখির আবাস নিরাপদ করতে গ্রামবাসীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কেউ যদি পাখির ক্ষতি করতে চায়, তাহলে প্রশাসনকে অবগত করার জন্য বলা হয়েছে।