
বৃষ্টিকে সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ রহমত ও কল্যাণকর নিদর্শন হিসেবে গণ্য করা হয়। এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ মানবজাতিসহ সকল প্রাণীর জন্য রিজিকের ব্যবস্থা করেন। অর্থাৎ, বৃষ্টির সঙ্গে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর জীবনধারণ এবং রিজিকের এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বিদ্যমান।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বৃষ্টি প্রসঙ্গে বলেন, ‘আর আমি আসমান থেকে বরকতময় পানি বর্ষণ করেছি। অতঃপর তা দ্বারা আমি উৎপন্ন করি বাগ-বাগিচা ও কর্তনযোগ্য শস্যদানা।’ (সুরা কাফ, আয়াত: ৯)
অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘আমি আকাশ থেকে পরিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করি।’ (সুরা ফুরকান: ৪৮)। এই আয়াতগুলোতে বৃষ্টির পানির পবিত্রতা ও উপযোগিতার ইঙ্গিত রয়েছে।
বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ। নবী করিম (স.) বৃষ্টির পানি দিয়ে অজু করতেন এবং এর ব্যবহারকে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ বলেছেন (আবু দাউদ: ১১২, তাহারাত অধ্যায়)। জলবায়ু পরিবর্তনের এই যুগে এই সুন্নাহ বাস্তবায়ন পরিবেশ সংরক্ষণ ও পানির টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে।
হাদিসে অজুর জন্য বৃষ্টির পানির গুরুত্ব এভাবে বর্ণিত হয়েছে: হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘বৃষ্টির পানিতে যদি প্রকাশ্য কোনো নাপাক না থাকে অথবা পানির রং, স্বাদ, গন্ধের যে কোনো একটা পরিবর্তন না হয়ে যায় – তাহলে জমিয়ে রাখা বা জমে থাকা বৃষ্টির পানি দিয়েও অজু জায়েজ আছে।’
তাই খাল-বিল, ডোবা, জলাশয় বা কোনো পবিত্র পাত্রে জমে থাকা পরিষ্কার বৃষ্টির পানি দিয়ে অজু করতে কোনো বাধা নেই। (দুররুল মুখতার: ১/৩২৩, হাশিয়াতুত তাহতাবি: ১৯-২০)
হাদিস বিশেষজ্ঞদের মতে, সাহাবায়ে কেরামও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করতেন (ফিকহুল ইসলামি: ৪/২৩১)। নবীজি (স.) নিজেও বৃষ্টির পানি দিয়ে অজু করতেন (সহিহ মুসলিম: ৬১২), যা এই অনুশীলনের গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
এভাবে ইসলাম বৃষ্টির পানিকে কেবল প্রাকৃতিক ঘটনা হিসেবে নয়, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে এক মহৎ দান এবং মানব কল্যাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে দেখে, যা সংরক্ষণ ও সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশ ও জীবনের উন্নতি সাধন করা সম্ভব।
Comments