
ভাষাসৈনিক, কবি, প্রাবন্ধিক ও রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ আহমদ রফিক আর আমাদের মাঝে নেই। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর, ২০২৫) রাত ১০টা ১২ মিনিটে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। তাঁর বিশেষ সহকারী মো. রাসেল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বারডেম হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মৃত্যুর সাত মিনিট আগে আহমদ রফিক কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত হন। এর আগে বুধবার বিকেলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের প্রধান ডা. কানিজ ফাতেমার তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। চিকিৎসকরা জানান, কিডনির সমস্যার পাশাপাশি সম্প্রতি তিনি একাধিকবার ‘মাইল্ড স্ট্রোক’-এর শিকার হয়েছিলেন।
গত ১১ সেপ্টেম্বর ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর তাঁকে পান্থপথের হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে সেখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুবিধার অভাবে গত রোববার তাঁকে বারডেম হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
জীবন ও কর্ম
১৯২৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্ম নেওয়া আহমদ রফিক ছিলেন ভাষা আন্দোলনের একজন অগ্রসৈনিক। তিনি নিউ ইস্কাটনের গাউসনগরে একটি ভাড়া বাসায় একাকী জীবনযাপন করতেন। ২০০৬ সালে স্ত্রীকে হারানো এই নিঃসন্তান কবি ও প্রাবন্ধিকের ব্যক্তিগত সংগ্রহে ছিল বিপুল সংখ্যক বই, যা ছিল তাঁর একমাত্র উল্লেখযোগ্য সম্পদ।
ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস রচনায় তাঁর অবদান অপরিসীম। শতাধিক গ্রন্থ রচনা ও সম্পাদনার মাধ্যমে তিনি বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বহু সম্মাননা লাভ করেন। দুই বাংলার রবীন্দ্রচর্চায় তাঁর অবদান অনন্য। কলকাতার টেগর রিসার্চ ইনস্টিটিউট তাঁকে ‘রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য’ উপাধিতে ভূষিত করে।
স্বাস্থ্যগত জটিলতা
২০১৯ সাল থেকে আহমদ রফিকের দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে শুরু করে। অস্ত্রোপচার সত্ত্বেও তিনি ২০২৩ সালে প্রায় সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েন। ২০২১ সালে পড়ে গিয়ে পা ভাঙার পর থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে যায়। বুদ্ধিজীবী মহল তাঁর উন্নত চিকিৎসা ও রাষ্ট্রীয় সহায়তার দাবি জানিয়েছিল।
শেষ ইচ্ছা
আহমদ রফিক তাঁর মৃত্যুর আগে শরীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল মেডিকেল কলেজে দান করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির জন্য তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
Comments