Image description

২০২৫ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন ভেনেজুয়েলার সাবেক বিরোধী দলীয় নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো। শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বিজয়ী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করে নরওয়ের নোবেল কমিটি। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর কট্টর বিরোধী এই রাজনীতিবিদ ইসরায়েল ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ ও একজন প্রকাশ্য সমর্থক। 

ইসরায়েলের প্রকাশ্য সমর্থক মারিয়া মাচাদো অতীতেও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি নেতানিয়াহুকে চিঠি লিখে ভেনেজুয়েলায় সামরিক হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানান।

শনিবার (১১ অক্টোবর) জর্ডানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রোয়া নিউজের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এ তথ্য।  

প্রতিবেদন অনুযায়ী, শান্তিতে নোবেল জয়ের পরপরই মাচাদোর একটি সাক্ষাৎকার ভাইরাল হয়েছে, যেটি তিনি এক ইসরায়েলি টিভিকে দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি গর্বের সঙ্গে বলেন, আমি বিশ্বাস করি এবং আমি ঘোষণা দিচ্ছি, ইসরায়েলের সমর্থনে আমাদের দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করা হবে।

এছাড়া, ২০১৮ সালে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কাছে একটি চিঠি লেখেন তিনি। ওই চিঠিতে নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে উৎখাত করতে ভেনেজুয়েলায় সামরিক হামলা চালানোর জন্য ইসরায়েলকে আহ্বান জানান তিনি।

এমনকি গাজায় ইসরায়েল যে বর্বরতা চালিয়ে আসছে, সেটির পক্ষেও নিজের অবস্থান ব্যক্ত করেছিলেন ভেনেজুয়েলার এ নারী রাজনীতিবিদ।

সবশেষ নোবেল জয়ের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মাচাদো তার পুরস্কারটি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে উৎসর্গ করেছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে ভেনেজুয়েলার এ নেত্রীর। তিনি আত্মগোপনে থেকে ভেনেজুয়েলার সরকারের বিরুদ্ধে বিদেশি সমর্থন আদায়ের চেষ্টাও করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও মারিয়ার প্রশংসা করে বলেছিলেন, মারিয়া হলেন স্থিতিস্থাপকতা, দৃঢ়তা এবং দেশপ্রেমের মূর্ত প্রতীক।

২০২৪ সালে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর এই মারিয়া কোরিনা মাচাদোকে গ্রেপ্তার করেছিল মাদুরো সরকার। ওই সময় ট্রাম্প নিজে তার মুক্তির জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন।

এদিকে ‘গণতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রী’ হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচয় পাওয়া মারিয়া কোরিনা মাচাদো নোবেল পাওয়ার পর ভেনেজুয়েলায় তার কর্মকাণ্ড নিয়ে একটি কলাম লিখেছেন ‘কোডপিংকের’ লাতিন আমেরিকা ক্যাম্পেইন কো-অর্ডিনেটর ও জন্মসূত্রে ভেনেজুয়েলার নাগরিক মিচেল এলনার। সেখানে স্পষ্ট ভাষায় এ কলামিস্ট  লিখেছেন, ‘মারিয়ার মতো ডানপন্থিরা যখন নোবেল শান্তি পুরস্কার জেতে তখন শান্তির আসলে কোনো অর্থ হয় না।’

সেই লেখায় মাচাদোর ‘কালো কীর্তির’ একটি বড় তালিকা দিয়েছেন এলনার। এতে তিনি উল্লেখ করেছেন—

মারিয়া মাচাদো ২০০২ সালের ভেনেজুয়েলার সামরিক অভ্যুত্থানে সহায়তা করেছিলেন, যেটি স্বল্প সময়ের জন্য একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করেছিল। এছাড়া, তিনি কারামোনা ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছিলেন, যেটি রাতারাতি ভেনেজুয়েলার সংবিধান এবং সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিলুপ্তি ঘটিয়েছিল।

ভেনেজুয়েলার সরকার উৎখাতে মাচাদো অনেকটা প্রকাশ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করেছেন। নিজের অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে ভেনেজুয়েলাকে ‘স্বাধীন’ করতে বিদেশি সেনাদের হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কয়েকদিন আগে ভেনেজুয়েলায় হামলার হুমকি দিয়েছিলেন এবং সেটিকে উৎফুল্লভাবে সমর্থন জানিয়েছিলেন মারিয়া। এছাড়া, ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ মোতায়েনকেও সমর্থন করেছেন তিনি।

ভেনেজুয়েলার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতেও যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছিলেন মারিয়া মাচাদো, যদিও তিনি জানেন এ নিষেধাজ্ঞার ফল ভোগ করবে গরীব, অসুস্থ ও কর্মজীবী মানুষরা।

এমনকি ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় কথিত ‘অন্তর্বর্তী সরকার’ও গঠন করেছিলেন মাচাদো এবং নিজেই নিজেকে সেই সরকারের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছিলেন তিনি।

প্রকাশ্যে ইসরায়েলকে সমর্থন জানিয়ে শান্তিতে নোবেলজয়ী এ নেত্রী জানিয়েছিলেন, কখনো ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হলে তিনি দেশটির ইসরায়েলি দূতাবাস ফিলিস্তিনের দখলকৃত জেরুজালেমে স্থানান্তর করবেন। ফিলিস্তিনের গাজায় আগ্রাসনের ব্যাপারে দখলদার ইসরায়েলের সঙ্গে একাত্বতাও প্রকাশ করে তিনি।

আর এখন ভেনেজুয়েলার তেল, পানি এবং অবকাঠামো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলছেন মাচাদো। ১৯৯০ সালের দিকে এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে লাতিন আমেরিকার বেশিরভাগ দেশের পরিস্থিতি শুধু খারাপই হয়েছিল।

এছাড়া ২০১৪ সালে ভেনেজুয়েলাজুড়ে ‘লা সালিদা’ নামে একটি আন্দোলন শুরু করেন এই মারিয়া করিনা মাচাদো। পশ্চিমা গণমাধ্যম আন্দোলনটিকে শান্তিপ্রিয় হিসেবে দেখালেও; প্রকৃতপক্ষে সেটি ছিল সহিংস।