Image description

একসময় পতিত জমিতে ঝোপঝাড় আর আগাছা ছাড়া কিছুই জন্মাত না। আজ সেই জমিতেই সবুজের সমারোহ—ঘাসে ভরে উঠেছে মাঠের পর মাঠ। সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া ও আশপাশের চরাঞ্চল এখন যেন গোখাদ্য উৎপাদনের এক বিশাল ক্ষেত্র। নেপিয়ার, পাকচং, জার্মান, দাড়াঁ পিও-৪, পাড়া, এপ্রিল ও দেশীয় দুবলা-দোল ঘাস চাষ এখন গ্রামীণ জীবনে এনেছে নতুন সম্ভাবনার আলো।

স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, আগে গরুর জন্য খড়, ভুসি আর খৈলই ছিল প্রধান খাদ্য। এখন নেপিয়ার ও পাকচং ঘাস চাষ করে তারা নিজের খামারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারেও বিক্রি করছেন। এতে বাড়ছে আয়, তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান। একসময়ের প্রান্তিক কৃষকরা আজ আত্মনির্ভরতার পথে হাঁটছেন।

কাজিপুরের মায়েজবাড়ি এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, মাত্র দুই বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাস লাগিয়ে প্রতি মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করছেন তিনি। “এই ঘাস কাটতে তেমন খরচ লাগে না, কিন্তু চাহিদা প্রচুর। স্থানীয় হাটে প্রতিমণ ঘাস বিক্রি করি ৫০০-৬০০ টাকায়,” বলেন তিনি আনন্দভরা কণ্ঠে।

প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সিরাজগঞ্জ জেলার ৯টি উপজেলায় মোট ৩,২৭৫ হেক্টর জমিতে নেপিয়ারসহ বিভিন্ন জাতের ঘাস চাষ হয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী ঘাসের জমি ২৭৫ হেক্টর এবং অস্থায়ী ঘাসের জমি প্রায় ৩,০০০ হেক্টর। প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে গাজীপুর ও সাভার থেকে কাটিং এনে কৃষকেরা রোপণ করেন। আবার জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকেও কৃষকদের মাঝে ঘাসের কাটিং সরবরাহ করা হয়।

বিশেষ করে চরাঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে এই চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। পতিত জমি, রাস্তার ধারে, পুকুরপাড় কিংবা বাড়ির আঙিনায়ও এখন দেখা মিলছে নেপিয়ার ঘাসের সারি। যমুনা নদীর তীরবর্তী বেলকুচি, চৌহালী, কাজিপুর ও শাহজাদপুরের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল যেন এক বিশাল সবুজ সমুদ্র।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. একেএম আনোয়ারুল হক বলেন, “দেশি ও বিদেশি জাতের ঘাস চাষে কৃষকদের আমরা নিয়মিত পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। বিশেষ করে নেপিয়ার পাকচং ঘাস দ্রুত বাড়ে এবং গরুর দুধ উৎপাদন বাড়ায়। কৃষকেরা এখন বুঝতে পেরেছেন, এই ঘাসই তাদের ভবিষ্যতের মূল পুঁজি।”

বর্তমানে জেলাজুড়ে প্রায় ২০ হাজার ছোট-বড় গোখামার রয়েছে। এই খামারগুলোর অনেকেই এখন নিজেরাই ঘাস চাষ করে গোখাদ্য উৎপাদন করছেন। ফলে খাদ্য খরচ কমেছে, লাভ বেড়েছে বহুগুণ।

চরের কৃষক রহিম উদ্দিনের ভাষায়, “আগে খামারে গরু পালতে খাবারের চিন্তা করতাম, এখন আর তা লাগে না। নিজের জমির ঘাসেই চলে সব। এখন ঘাসই আমাদের আশীর্বাদ।”

সবুজ নেপিয়ারের এই চাষ এখন শুধু অর্থনৈতিক নয়, পরিবেশগতভাবেও ইতিবাচক পরিবর্তন আনছে। মাটির উর্বরতা রক্ষা, ক্ষয়রোধ এবং চরাঞ্চলের ভূমি ব্যবহারে নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে এই সবুজ বিপ্লব।

সিরাজগঞ্জের চরাঞ্চলে আজ তাই একটাই সুর সবুজ ঘাসে সোনালী ভবিষ্যৎ।