
অক্টোবর ২০২৫। সুইডেনে নোবেল পুরস্কার ঘোষণার মুহূর্তগুলো যেন বিশ্বজুড়ে জ্ঞান, মানবতা ও সাহসিকতার এক অনন্য উৎসব। ছয়টি বিভাগে ১৪ জন ব্যক্তি অসাধারণ কাজের স্বীকৃতি পান। এই তালিকায় সবচেয়ে বেশি প্রতিনিধিত্ব ছিল যুক্তরাষ্ট্রের—পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে পাঁচজনই দেশটির নাগরিক। পদার্থবিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান ও রসায়নে তারা রেখেছেন অনন্য অবদান।
পদার্থবিজ্ঞানে জন এম. মার্টিনিজ ও জন ক্লার্ক কোয়ান্টাম টানেলিং ও শক্তির কোয়ান্টাইজেশন নিয়ে যুগান্তকারী গবেষণার জন্য নোবেল পান। চিকিৎসাবিজ্ঞানে মেরি ই. ব্লাঙ্কো ও ফ্রেড র্যামসডেল মানবদেহে ইমিউন টলারেন্সের জটিল প্রক্রিয়া উন্মোচন করেন—যা অটোইমিউন রোগের চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনা তৈরি করে। রসায়নে ওমর এম. ইয়াঘি তার মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্কস নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির দিগন্ত খুলে দেন।
শান্তিতে নোবেল পান ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে যিনি সাহসী ভূমিকা রেখেছেন। সাহিত্যে হাঙ্গেরির লেখক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই তাঁর বিমূর্ত ও গভীর লেখনীর জন্য সম্মানিত হন। অর্থনীতিতে সম্মান পান কানাডার পিটার হাওয়িট, নেদারল্যান্ডসের জোয়েল মোকিয়র, এবং ফ্রান্সের ফিলিপ আগিওঁ।
তবে এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির আবহে আলোচনায় উঠে আসেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নোবেল ঘোষণার দিনই তিনি দাবি করেন:
“যিনি আজ শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন, তিনি আমাকে ফোন করে বললেন—‘আমি এই পুরস্কারটি আপনার সম্মানে গ্রহণ করছি। কারণ আপনি-ই এর প্রকৃত প্রাপক।’ এটা সত্যিই খুব সম্মানজনক। আমি বলিনি, তাহলে আমাকে দিয়ে দাও। তবে আমার মনে হয়, তিনি হয়তো সেটা ভাবতে পারেন।”
ট্রাম্পের এই মন্তব্য অবশ্য নতুন নয়। এর আগেও তিনি দাবি করেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনার প্রচেষ্টায়—বিশেষ করে আব্রাহাম অ্যাকর্ডস–এ তাঁর ভূমিকা ছিল নোবেল-যোগ্য। তাঁর প্রশাসনের সময়ে ইসরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ও বাহরাইনের মধ্যে স্বীকৃতিসূচক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়, যা তিনি ঐতিহাসিক সফলতা হিসেবে তুলে ধরেন।
তবে নোবেল কমিটির মূল্যায়নের দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা ভিন্ন। তারা দীর্ঘস্থায়ী মানবিক প্রভাব, গবেষণা, মানবাধিকার রক্ষা এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মতো বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বা প্রশাসনিক সাফল্যের চেয়ে তারা খোঁজে মৌলিক ও মানবিক পরিবর্তনের প্রমাণ।
এ বছর যখন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা বৈশ্বিক স্বীকৃতি অর্জন করেছেন, তখন ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া যেন নোবেল পুরস্কারের রাজনৈতিক ও নৈতিক গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে নতুন এক আলোচনার সূত্রপাত করলো। এতে যেমন ব্যক্তিগত প্রত্যাশার প্রতিফলন রয়েছে, তেমনি এটি নোবেল নিয়ে ভিন্ন মত ও বিতর্কেরও একটি ইঙ্গিত।
Comments