Image description

বগুড়ার শাজাহানপুরে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ ভবনে চলছে গ্রামীণ মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। উপজেলার ২৫টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রতি মাসে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ প্রাথমিক চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু প্রায় তিন দশক আগে নির্মিত এসব ভবনের বেশিরভাগই এখন ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা গ্রামীণ মানুষ ও কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিনিয়তই জানমালের অনিশ্চয়তা ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

সরকার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে ১৯৯৭ সালে ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন প্রকল্প’ গ্রহণ করে। ১৯৯৮ সালের মধ্যে প্রতিটি ইউনিয়নে তিনটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। সে অনুযায়ী শাজাহানপুর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে মোট ২৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করা হয়।

এর মধ্যে ২০২০ সালে ১টি (শৈলধুকরি সিসি) এবং ২০২২ সালে আরও ৪টি (খন্ডক্ষেত্র সিসি, কামারপাড়া সিসি, চকজোড়া সিসি ও জোড়া সিসি) ভবন পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। তবে বাকি ২০টি ভবন দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারহীন অবস্থায় পড়ে থেকে এখন অত্যন্ত জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

খোট্টাপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভবনের ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে, দেয়ালের ইট নড়বড়ে হয়ে গেছে। যে কোনো মুহূর্তে দেয়াল ধসে পড়লে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে—এমন আশঙ্কায় ভয়ে ভয়ে সেবা নিচ্ছেন গ্রামীণ মানুষ।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যানবিদ আব্দুস সোবহান জানান, সরকারি ছুটি ও শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহে ৬ দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডাররা সেবা প্রদান করেন। প্রতিটি ক্লিনিকে ২০ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হয়।

তিনি আরও জানান, সপ্তাহে তিন দিন স্বাস্থ্য সহকারীরা ইপিআই টিকা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান করেন এবং বাকি তিন দিন পরিবার কল্যাণ সহকারীরা পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সেবা দিয়ে থাকেন। প্রতিটি ক্লিনিকে মাসে গড়ে প্রায় ১,২০০ জন মানুষ সেবা নেন। ফলে ২৫টি ক্লিনিক মিলে প্রতি মাসে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আসছেন। তুলনামূলকভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাসে গড়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষ চিকিৎসা নেন।

শাজাহানপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহনাজ পারভীন বলেন, খোট্টাপাড়া, খলিশাকান্দি, খাদাস, আতাইল, জোড়া, পদ্মপুকুর ও দেছমা কমিউনিটি ক্লিনিকসহ অন্তত ১০-১২টি ভবন বর্তমানে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ভবনের তালিকা তৈরি করে প্রায় এক বছর আগে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, অচিরেই পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, বগুড়ার উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পুর) মো. শাহীন আলম জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো পুনর্নির্মাণের জন্য প্রকল্প তৈরি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো অনুমোদন পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়দের দাবি, অবিলম্বে এসব জরাজীর্ণ ভবন সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করা না হলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। একই সঙ্গে সরকারি এই উদ্যোগে পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।