Image description

অনলাইনে ছোট পরিসরে ব্যবসা (হস্তশিল্প, বুটিকস, শাড়ি, কসমেটিকস) করে অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা নিজেদের জাত চিনিয়েছেন। তবে একজন নারী উদ্যোক্তা হয়ে অনলাইনে মাছ বিক্রি করা খুবই চ্যালেঞ্জিং। বোধহয় এই চ্যালেঞ্জটি শুধুমাত্র নারী উদ্যোক্তা কোহেলি হক নিজেই নিয়েছেন। একটি ফেসবুক পেজ খুলে অনলাইনে বিভিন্ন রকমের ফরমালিনমুক্ত মাছ বিক্রি করছেন তিনি। নারীদের কর্মক্ষেত্রে অনলাইন এখন বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এতে করে শুধু ঘরে বসে নয়, নারীর অনেক কর্মসংস্থানও তৈরি হয়েছে। তরুণরা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করছেন এবং এগিয়ে যাচ্ছেন। নারীদের প্রতিষ্ঠিত হয়ে দাঁড়ানোর খুব ভালো মাধ্যম হতে পারে এই অনলাইন ব্যবসা। সেই ধারণা থেকেই বলছি কুমিল্লা লাকসামের অনলাইন ব্যবসার সফল নারী কোহেলি হকের গল্প।

কোভিড-১৯-এর কারণে দেশে লকডাউন শুরু হলে কোহেলি হকের মাথায় অনলাইন ব্যবসার আইডিয়া আসে। মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে সারা দেশের ভোক্তাদের ফরমালিনমুক্ত মাছ বিক্রি করা। ২০১৯ সালে কোহেলি হকের স্বামী এনামুল হক ও তার ভাই ইকবাল হোসেনের সহযোগিতা নিয়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসার যাত্রা শুরু করেন। ফেসবুক পেজ খুলে প্রথমে ১০ কেজি রূপচাঁদা মাছের অর্ডার পান। যাতে তার আয় হয়েছিল ১৮০০ টাকা। এরপর আর কোহেলি হককে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মিলছিল একের পর এক অর্ডার। ফেসবুক অনলাইনে তার পেজের নাম "মাছে ভাতে বাঙালিয়ানা"। বিভিন্ন বাজার থেকে খুঁজে খুঁজে নদী-হাওরের মাছ কিনে আনেন। এরপর সেগুলো ভালোভাবে প্যাকেজিং করে বিক্রি করেন অনলাইনে। তার মাছের ব্যবসা এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনলাইনে।

পেজ খুলে বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে অনলাইন ব্যবসা শুরু করেন কোহেলি। ফেসবুক তার স্বপ্নপূরণে সহায়ক হয়েছে। দেশের বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ছাড়াও বর্তমানে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও সুইজারল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিজ দায়িত্বে রপ্তানি করে থাকেন। প্রতি মাসে অন্তত ৭০-৮০ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হচ্ছে কোহেলির ফেসবুকভিত্তিক অনলাইন ''মাছে ভাতে বাঙালিয়ানা'' থেকে। সব খরচ বাদ দিয়ে মাছের ব্যবসা থেকে মাসে প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকা আয় করেন তিনি।

কোহেলি হক ১৯৮৬ সালের ২৫ এপ্রিল লাকসাম পৌরশহরের ফতেপুর গ্রামে পিতৃভূমিতে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মৃত দেলোয়ার হোসেন, তিনিও একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ছিলেন। আর মা শামসুন্নাহার বেগম ছিলেন গৃহিণী। কোহেলি হক ১৯৯২ সালে দৌলতগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করে পরে পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি কলেজে ভর্তি হন। এইচএসসি পরীক্ষার সময় ২০০৬ সালে বিয়ের বেড়াজালে আটকে পড়েন কোহেলি হক। ফলে থমকে যায় তার শিক্ষাজীবন। বৈবাহিক জীবনে স্বামীসহ তাদের তিনটি ছেলে সন্তান রয়েছে।

এমন উদ্যোগ সম্পর্কে কোহেলি হক বলেন, "আমার পরিবার আমাকে প্রথম থেকেই ব্যবসার জন্য উৎসাহ দিয়েছে। এখন আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজনও উৎসাহ দিচ্ছে। আমাদের পরিবারে অর্থনৈতিক কোনো সংকট নেই। কিছু একটা করার ইচ্ছা থেকেই উদ্যোক্তার খাতায় নাম লিখিয়েছি।"

পড়াশোনা শেষ করে সংসার করার পাশাপাশি নিজে কিছু একটা করার দৃঢ় ইচ্ছে থেকেই মাথায় আসে অনলাইন ব্যবসার প্ল্যান। তবে এ কাজে সবসময় তার স্বামী ও বড় ভাই ইকবাল হোসেন অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। সেই সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির আদর ও সমর্থনের (Support) কথাও জানান তিনি।

বর্তমান ব্যবসার অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, "দেশের বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও হোটেলে মাছ বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও বাসাবাড়িতে ককশিটের বাক্সে বরফ দিয়ে বাসে করে মাছ পাঠাই। বরফে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত মাছ সতেজ থাকে। দেশের জেলা-উপজেলায় আমার পরিচিত ডেলিভারিম্যান মাছ সংগ্রহ করে গ্রাহকের বাসায় পৌঁছে দিচ্ছে। প্রতি সপ্তাহেই গ্রাহকদের অর্ডার থাকে। ফেসবুক পেজের পাশাপাশি ফোনেও অর্ডার আসে। এছাড়াও অনলাইনে বিদেশে মাছ রপ্তানি করে থাকি। স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন বাজার ঘুরে-ঘুরে নদী-হাওরের মাছ কিনি। গ্রাহকরা আমার কাছ থেকে মাছ নিয়ে যখন সন্তুষ্টির কথা জানান তখন নিজের সকল প্রচেষ্টা সফল বলে মনে হয়। বর্তমানে ভালো কেনাবেচা চলছে এবং ধীরে ধীরে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তার অনলাইন পেজ “মাছে ভাতে বাঙালিয়ানা”। ভবিষ্যতে তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত দেখতে চান। আমার স্বপ্ন ছিল একজন উদ্যোক্তা হওয়ার। সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি, সঙ্গে পরিশ্রম করে যাচ্ছি। বলতে গেলে অনেকটাই শূন্য থেকে শুরু করেছিলাম। অনলাইনে ব্যবসা করে আলহামদুলিল্লাহ ভালো লাভবান হয়েছি। তাই অন্য নারীদেরও উচিত হবে শুধু শুধু ঘরে বসে না থেকে সংসারের পাশাপাশি কিছু একটা করা। স্বপ্ন, সামান্য পুঁজি আর পরিশ্রম থাকলেই অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।"