Image description

একসময় যে জমি ছিলো যমুনার পানির নিচে, এখন সেখানে নতুন করে জেগে উঠছে চর। দেখা দিচ্ছে সবুজের আভা। চরাঞ্চলের কৃষকেরা এখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কালাই, তিল, বাদাম আর নানা জাতের সবজি চাষে। শুষ্ক মৌসুমের আগমনী বার্তা যেন এনে দিয়েছে নতুন আশার আলো।

কাজিপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়া চরের কৃষক মোনাফ, জলিল ও মুস্তাফা বলেন, “যমুনায় পানি কমতে থাকায় চাষাবাদ শুরু করেছি। যদিও দেরিতে শুরু করতে হচ্ছে, তবু লোকসান পুষিয়ে নেবার আশা করছি।”

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কাওয়াকোলা চরের কৃষক রুবেল ও জাবের জানান, কয়েক সপ্তাহ আগেও তাদের জমিতে পানি ছিলো হাঁটুসমান। এতে ফসল বপন সম্ভব হয়নি। “পানি বাড়ায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু এখন পানি কমে যাওয়ায় জমি তৈরি করে কালাই, তিল, বাদামসহ নানা ফসলের চাষ শুরু করেছি,” বলেন তারা।

চরাঞ্চলের জীবনযাত্রা শুধু কৃষিকাজেই সীমাবদ্ধ নয়। এখানকার মানুষদের শহরের সঙ্গে যোগাযোগও নির্ভর করে নদীর জলে। 

স্কুল–কলেজগামী শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীরা জানান, “আমরা নৌকায় করে শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিসে যাতায়াত করি। পানি কমায় ছোট ছোট ডুবচর উঠতে শুরু করেছে। এখনো তেমন সমস্যা না হলেও শিগগিরই চলাচলে অসুবিধা হবে।”

যমুনা নদীর গতিপ্রকৃতি বদলে যাওয়ায় চরাঞ্চলের মানুষের জীবনও বদলায় প্রতিনিয়ত। পানি ওঠা-নামার সঙ্গে তাদের আনন্দ–দুঃখ জড়িয়ে আছে। পানি বাড়লে ফসল তলিয়ে যায়, ঘরবাড়ি হারায়; আবার পানি নামলে জেগে ওঠে নতুন চর, শুরু হয় জীবিকার নতুন লড়াই।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, “যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে, সম্ভবত আর বৃদ্ধি পাবে না।”

তবে স্থানীয়দের মধ্যে শঙ্কা রয়ে গেছে। কারণ প্রতি বছর পানি নামার সময়ই দেখা দেয় ভয়াবহ নদীভাঙন। নতুন চরের জন্ম যেমন জীবিকার আশীর্বাদ, তেমনি পুরনো চরের বিলীন হওয়া জীবনের বড় বেদনা।

যমুনা পাড়ের এই মানুষগুলো তাই নদীর সঙ্গেই বাঁচে, নদীর সঙ্গেই লড়ে। পানি বাড়া-কমার এই চক্রের মধ্যেই তাদের জীবনের গল্প, তাদের হাসি-কান্না, তাদের টিকে থাকার সংগ্রাম।