Image description

খুলনা অঞ্চলের নদ-নদী এখন আতঙ্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। গত দেড় বছরে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন নদ-নদী থেকে ৭০টিরও বেশি অজ্ঞাত ও ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এসব হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই, যা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।

নৌ-পুলিশের তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উদ্ধারকৃত এসব মরদেহের মধ্যে ৪৫ জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেলেও ২৭টি মরদেহের পরিচয় এখনও অজানা রয়ে গেছে। আরও বিষয় হলো, ২০২৫ সালে খুলনা অঞ্চলে নথিভুক্ত ৯টি নদীঘটিত হত্যা মামলার একটিতেও এখনো তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি নৌ-পুলিশ।

তাজকির আহমেদ হত্যাকাণ্ড: ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪-এ প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে এসে নিখোঁজ হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাজকির আহমেদ। সাত দিন পর খুলনার ভৈরব নদ থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার হয়। তদন্তে জানা যায়, প্রেমিকার প্রাক্তন স্বামী বন্ধুদের নিয়ে তাকে হত্যা করে মরদেহ নদীতে ফেলে দেয়।

আহাদ শেখ হত্যাকাণ্ড: গত ৭ জুন খুলনার রূপসা উপজেলার নন্দনপুর থেকে নিখোঁজ হন যুবক আহাদ শেখ। দুদিন পর বাড়ির কাছের আঠারোবেকী নদীতে তার মরদেহ ভেসে ওঠে। পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করে জানিয়েছে যে, আহাদকে হত্যার পর মরদেহ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। তবে ডিএনএ জটিলতায় চার মাস পেরিয়ে গেলেও আহাদের পরিচয় শনাক্ত বা মরদেহ হস্তান্তর হয়নি।

নৌ-পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই অঞ্চলের নদী থেকে উদ্ধার হওয়া ৭০টিরও বেশি মরদেহের বেশিরভাগই হত্যাকাণ্ডের শিকার। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে এই সংখ্যা প্রায় ৪৫ শতাংশ বেড়েছে।

গত এক বছরে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুর জেলাজুড়ে বিভিন্ন নদ-নদী থেকে মোট ৫০টি মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে ৩২ জন পুরুষ, সাতজন নারী এবং ১১ জন শিশু। ২০ জনের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। উদ্ধারকৃত লাশগুলোর মধ্যে রূপসা নদী থেকে ৪০ শতাংশ, ভৈরব নদ থেকে ৩০ শতাংশ, পশুর নদী থেকে ২০ শতাংশ এবং অন্যান্য নদী থেকে ১০ শতাংশ উদ্ধার হয়েছে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানো এবং আধুনিকায়নের মাধ্যমে অপরাধ দমনের পাশাপাশি কঠোর আইন প্রয়োগের ওপর জোর দিয়েছেন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ডিসিপ্লিনের বিভাগীয় প্রধান পুনম চক্রবর্তী মনে করেন, আলামত নষ্ট ও মরদেহ গোপন করতে অপরাধীরা কৌশল বদলাচ্ছে। এছাড়াও সামাজিক অস্থিরতা এবং কঠোর আইন প্রয়োগের অভাবে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

খুলনা অঞ্চলের নৌ-পুলিশ সুপার ডা. মুহাম্মদ মঞ্জুর মোর্শেদ জানিয়েছেন, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুর জেলার নদী নিয়ে গঠিত পুলিশের নৌ অঞ্চলটির দীর্ঘ সীমানা এবং প্রশাসনিক জটিলতার কারণে অপরাধীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। তিনি পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই সংকট সমাধানের চেষ্টা চলছে বলে জানান।