Image description

মুষলধারে বৃষ্টিতে যখন গ্রামজুড়ে নেমে এসেছে নরম শীতলতা, তখন ধলেশ্বরী নদীর পাড়ের এক চায়ের দোকানে জমেছে অচেনা এক আড্ডা। ছোট্ট দোকানটির সামনে কাদা মাখা পথ, টিনের ছাউনি বেয়ে ঝরে পড়ছে বৃষ্টির ধারা। এমন দৃশ্যের মধ্যেই হঠাৎ হাজির মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক আফরোজা খানম রিতা।

মানিকগঞ্জের ফুকুরহাটি ইউনিয়নের রাইল্লা গ্রামে ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে অবস্থিত চায়ের দোকানটিই সেদিন হয়ে ওঠে রাজনীতি ও স্মৃতিচারণের মিলনস্থল।

গ্রামের মানুষজন প্রথমে অবাক, পরে উচ্ছ্বসিত। নেত্রীকে এত কাছে পেয়ে তাদের চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক। কেউ চা এগিয়ে দেন, কেউ আবার নিজের জায়গা ছেড়ে দেন। শুরু হয় প্রাণবন্ত এক চায়ের আড্ডা– গল্পে মিশে রাজনীতি, স্মৃতি, আর মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা।

মুন্নুর স্মৃতিচারণে আবেগঘন পরিবেশ;
আড্ডার শুরুতেই উঠে আসে প্রয়াত শিল্পপতি ও সাবেক মন্ত্রী হারুন আর রশিদ খান মুন্নু'র স্মৃতি। গ্রামের প্রবীণ রহমত আলী বলেন, মুন্নু সাহেব আমাদের এলাকার গর্ব ছিলেন। তিনি শুধু রাজনীতিক নেতার উর্ধ্বে ছিলেন মানবিক মানুষ। তাঁর মতো নেতার অভাব আজও অনুভব করি।

আফরোজা খানম স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, আব্বার রাজনীতি ছিল মানুষের কল্যাণের রাজনীতি। তার আদর্শই আমাদের অনুপ্রেরণা। তিনি শিখিয়েছেন, রাজনীতি মানে ক্ষমতার লড়াই নয়, মানুষের ভালোবাসা অর্জনের চেষ্টা..। মানুষের পাশে থাকাই রাজনীতির আসল সার্থকতা। যতদিন বাঁচব, মানুষের জন্যই কাজ করে যাব। আপনারা যেন আমার মাঝেই আমার বাবাকে খুঁজে পান। 

বৃষ্টির শব্দের ভেতরেই খানিকটা সময়ে আলোচনার মোড় ঘুরে যায় জাতীয় নির্বাচনের দিকে। চায়ের কাপ হাতে প্রবীণ ভোটাররা জানতে চান, সামনে নির্বাচনে বিএনপি কী ভাবছে। নেত্রী মনোযোগ দিয়ে শোনেন, তারপর শান্ত কণ্ঠে বলেন, আমরা চাই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। জনগণই নির্ধারণ করুক কে ক্ষমতায় থাকবে। আমাদের একটাই লক্ষ্য জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা।

আফরোজা খানম বলেন, মানুষ যদি স্বাধীনভাবে ভোট দিতে না পারে, তাহলে গণতন্ত্র অর্থহীন হয়ে পড়ে। সেই অধিকার রক্ষার লড়াইই আমাদের মূল রাজনীতি।

আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে সাধারণ মানুষ জানতে চান– রাজনীতি কি এখনো মানুষের কল্যাণে কাজ করছে?, নির্বাচনের পর আমরা কি সত্যিই পরিবর্তন দেখব?, গ্রামের মানুষের জীবনে উন্নয়ন কতটা টেকসই হবে?

নেত্রী এসব প্রশ্নে মনোযোগ দেন, কারও উত্তর দেন, কারও প্রশ্ন মনে রাখেন। বলেন, আপনাদের প্রশ্নই আমাদের দায়িত্বের স্মারক। রাজনীতি যদি মানুষের জীবন বদলাতে না পারে, তবে সেটা রাজনীতি নয়, আত্মপ্রবঞ্চনা। 

তিনি আরো বলেন, দেশে আওয়ামী লীগ ১৭ বছর ছিল জনগণ তাদের দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য করেছে। এখনো বেশ ভালো নেই..। বিএনপি সরকার গঠন করলে জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করবে। এর জন্য জিয়ার আদর্শের দল ধানের শীষকে ক্ষমতায় আনতে হবে। তাহলে আমরা আপনাদের সাথে নিয়ে দেশটাকে সুন্দর করে সাজাতে পারব। 

তরুণদের পাশে থাকার অঙ্গীকার আড্ডায় উপস্থিত তরুণরা জানায় তাদের স্বপ্ন একটি স্বচ্ছ, সুযোগভিত্তিক রাজনীতি। তাদের উৎসাহ দিয়ে রিতা খানম বলেন, তরুণরা রাজনীতির প্রাণ। তোমরাই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়বে। রাজনীতিকে ভালোবাসো, মানুষকে ভালোবাসো তাহলেই পরিবর্তন আসবে।

চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে কেউ বলেন, এমন বৃষ্টিতে নেত্রীর সঙ্গে আড্ডা এ যেন জীবনের স্মরণীয় দিন। কেউ আবার নিঃশব্দে তাকিয়ে থাকেন, যেন মুহূর্তটা ধরে রাখতে চান চিরকাল।

বৃষ্টি থেমে গেছে, কিন্তু ধলেশ্বরী পাড়ের সেই ছোট্ট চায়ের দোকানে থেকে গেছে এক বিকেলের উষ্ণতার ছোঁয়া। নদীর ঢেউ তীরে আছড়ে পড়ছে, আর গ্রামের মানুষজনের মুখে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে নেত্রীর সেই কথা– 'আমার পৃথিবী খুব ছোট, মানিকগঞ্জের মাটি ও মানুষ নিয়েই আমার পৃথিবী।'