Image description

মুন্সীগঞ্জে অটোচালক হত্যা মামলায় আটক ৫ আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পুলিশ মামলা রেকর্ডের মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই ৫ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করে, যা এই মামলার দ্রুত রহস্য উদঘাটনে পুলিশের তৎপরতা প্রমাণ করে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন সোহাগ মোল্লা (৪৩), জয় (৩১), ইমরান (৩০), হারুন (৫১) এবং আলী হোসেন (৪০)। মুন্সীগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ এম সাইফুল আলম জানান, তাদের কাছ থেকে নিহতের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাটি উদ্ধার করা হয়েছে।

বুধবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে আসামিদের আদালতে হাজির করা হলে মুন্সীগঞ্জ আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত শারমিন, মোসা: রহিমা আক্তার ও দুরদানা রহমান তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেন। আদালতের কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মোঃ কামরুল ইসলাম মিঞা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আসামিরা ৩ জন বিচারকের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছেন। পরে আদালত তাদের জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। বর্তমানে আসামিরা কারাগারে রয়েছেন।

এর আগে, নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন পর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় অটোচালক মোহাম্মদ মজিবল মাঝির মরদেহ খাল থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এই হত্যার ঘটনায় রহস্য উদঘাটনে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। বুধবার (৫ নভেম্বর) মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে ওসি জানান, নিহত মজিবল মাঝি (৪৪) পেশায় অটোরিকশাচালক ছিলেন। তিনি বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার চর কুশারিয়া গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে তার পরিবার ঢাকার লালবাগে বসবাস করে।

গত ৩১ অক্টোবর বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটের দিকে মজিবল মাঝি অটোরিকশা নিয়ে গ্যারেজ থেকে বের হন। এরপর থেকে তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরদিন তাঁর ছেলে রাসেল ঢাকার লালবাগ থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করেন।

৩ নভেম্বর সকালে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার রতনপুর মধ্যপাড়া এলাকায় একটি ডোবায় বিছানার চাদর ও কম্বল পেঁচানো অবস্থায় ভেসে থাকা একটি অচেনা মরদেহ দেখতে পান স্থানীয় লোকজন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে। পরে নিহতের স্বজনরা এসে সেটি মজিবল মাঝির বলে শনাক্ত করেন। পুলিশ জানায়, নিহতের দুই হাত ও দুই পা মোটা প্লাস্টিকের রশি দিয়ে বাঁধা ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়, তাঁকে অন্যত্র হত্যা করে লাশ গুমের উদ্দেশ্যে ডোবায় ফেলে দেওয়া হয়েছে।

ঘটনার পর পুলিশ সুপার মুন্সীগঞ্জের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল)-এর তত্ত্বাবধানে ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সজিব দে’র নেতৃত্বে একটি চৌকস তদন্ত টিম গঠন করা হয়। প্রযুক্তির সহায়তায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তাঁদের বর্ণনা অনুযায়ী, ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যায় মজিবল মাঝিকে ‘মাওয়া যাওয়ার’ কথা বলে কৌশলে পঞ্চসার ইউনিয়নের তেলেরহিল এলাকার ইমরানের ভাড়াবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করিয়ে অচেতন করে ফেলা হয়। এরপর সোহাগ গলায় রশি প্যাঁচিয়ে ধরে, ইমরান পা ধরে রাখে এবং জয় বুকের ওপর বসে কাঁচি দিয়ে আঘাত করে তাঁকে হত্যা করে।

হত্যার পর লাশটি বিছানার চাদর ও কম্বলে পেঁচিয়ে সোহাগের অটোরিকশায় করে রতনপুর এলাকায় ফেলে দেওয়া হয়। পরদিন আসামিরা নিহতের অটোরিকশা হারুনের কাছে ৯৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে, পরে তা রামসিং আলীর গ্যারেজে আরও এক লাখ এক হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।