Image description

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে প্রকৃতি ধীরে ধীরে বদলে নিচ্ছে নিজের রূপ। ভোরবেলা কুয়াশায় মোড়ানো পাহাড়, কাপ্তাই হ্রদের ঢেউয়ে শিশিরের আভা এবং সড়কের দু’পাশে গাছের পাতায় ঝুলে থাকা শিশিরবিন্দু—এসব দৃশ্য মন ভরিয়ে দিচ্ছে প্রশান্তি ও রোমাঞ্চে। শীতের এই মৃদু ছোঁয়ায় পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে পার্বত্য পর্যটন নগরী রাঙ্গামাটি।

ইতোমধ্যে পাহাড়ে শীতের পরশ লেগেছে। সকালে জানালা খুললেই দেখা যায় কুয়াশার চাদরে ঢাকা পাহাড় ও হ্রদ। সূর্যের আলো দেরিতে উঁকি দিচ্ছে, বাতাসে হালকা শীতের অনুভূতি। এই কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল পর্যটকদের আকর্ষণ করছে ব্যাপকভাবে। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার দর্শনীয় স্পটগুলোতে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে সরকারি ছুটির দিনে ভিড় উল্লেখযোগ্য। শহরের আবাসিক হোটেলগুলোতে বুকিং মোটামুটি ভালো।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, রাঙ্গামাটি শহরের আইকন ঝুলন্ত সেতু ও পলওয়েল পার্কে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়। এখান থেকে পর্যটকরা ছুটছেন সাজেক ভ্যালি, শুভলং ঝর্ণা, আরণ্যক, রাজবন বিহার, আসামবস্তি, লাভ পয়েন্ট এবং মুন্সী আবদুর রউফ স্মৃতিসৌধসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে। দুর্গম পাহাড়ি এলাকাগুলো শীতে ভ্রমণের উপযুক্ত সময় হিসেবে পরিণত হয়েছে।

শীতের মৌসুম রাঙ্গামাটির পর্যটন শিল্পকে জাগরূক করেছে। স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রদায়ের আয়-রোজগার বাড়ছে। হোটেল-রেস্টুরেন্ট, হস্তশিল্প, চাকমা-মারমা তাঁতের কাপড়সহ ঐতিহ্যবাহী ব্যবসা জমে উঠেছে। 

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক মাহমুদা বেগম বলেন, “রাঙ্গামাটির পাহাড়ের প্রকৃতি আমাকে মুগ্ধ করে। প্রতি বছর আসি। রাস্তা-ঘাট উন্নত হলেও স্পটগুলোর অবকাঠামো আরও উন্নয়ন দরকার। তাহলে আরও পর্যটক আসবে। পাহাড় দেখলে মন বিশাল হয়ে যায়।”

কক্সবাজার থেকে আসা ইমরুল কায়েস জানান, “কক্সবাজারে সাগর আছে, কিন্তু রাঙ্গামাটির সবুজ পাহাড় ও শান্ত হ্রদ ভিন্ন মুগ্ধতা দেয়। খুব ভালো লাগছে।”

চট্টগ্রামের লাভলী আক্তার বলেন, “সবুজ পাহাড় ও কাপ্তাই হ্রদ অসাধারণ। তবে স্পটগুলো অগোছালো ও অপরিচ্ছন্ন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সংস্কার দরকার, তাহলে পর্যটক বাড়বে।”

ট্যুরিষ্ট গার্ড মোঃ আলমগীর জানান, “দীর্ঘ তিন মাস ঝুলন্ত সেতু পানিতে ডুবে ছিল, পর্যটক আসেনি। জীবিকায় কষ্ট হয়েছে। এখন সেতু ভেসে উঠেছে, পর্যটক আসছে। শীতে আরও বাড়বে বলে আশা।”

রাঙ্গামাটি পর্যটন নৌ-ঘাটের ম্যানেজার ফখরুল ইসলাম বলেন, “শীতের মৌসুম শুরু হয়েছে। পর্যাপ্ত পর্যটক আসবে। শতাধিক বোট প্রস্তুত। ভাড়ায় সরকার রাজস্ব পাবে।”

রাঙ্গামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক অলোক বিকাশ চাকমা জানান, “শীতে পর্যটক বাড়ছে। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে প্রচুর সমাগম হবে। পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে সংস্কার চলছে। শিশু পার্ক যোগ হচ্ছে, ঝুলন্ত সেতুতে রঙিন আলোকসজ্জা হচ্ছে। এতে পর্যটক ও রাজস্ব বাড়বে।”

শীতের এই মৌসুমে রাঙ্গামাটি যান্ত্রিক জীবনের ব্যস্ততা থেকে মুক্তি দিচ্ছে দূর-দূরান্তের পর্যটকদের। প্রকৃতির সৌন্দর্য ও পর্যটন শিল্পের সমন্বয়ে জেলাটি নতুন রূপে সাজছে।