পদ্মার চরে ১১ সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে 'অপারেশন ফাস্ট লাইট', গ্রেপ্তার ৫৮
পদ্মার চরে নদী পথের রাজা নামখ্যাত কাকনবাহিনী সহ ১১ টি সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে যৌথবাহিনীর দূর্ধষ অভিযান"অপারেশন ফাস্ট লাইট" পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে বিপুল পরিমান দেশীয় অস্ত্র-মাদক ও ১০টি আগ্নেয়াস্ত্র-গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে পদ্মার চর এলাকা ও ঈশ্বরদী উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথবাহিনী। গ্রেপ্তারকৃতদের অধিকাংশই পূর্বের বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী ছিলেন।
শনিবার (৮ নভেম্বর) দিবাগত রাত থেকে রবিবার সকাল ১১ টা পর্যন্ত রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ শাজাহানের নির্দেশনায় একসঙ্গে ১২ শত সদস্য নিয়ে "অপারেশন ফাস্ট লাইট" নামে এ অভিযান পরিচালনা করে যৌথবাহিনী।
জানা গেছে, পাবনার ঈশ্বরদী ও আমিনপুর, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর, নাটোরের লালপুর এবং রাজশাহীর বাঘা এলাকায় পদ্মার চর ও নদীপথে ব্যাপক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আসছিল কাকনবাহিনীসহ ১১ টি সন্ত্রাসী বাহিনী। কথায় কথায় গুলিবর্ষণ ও প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়ায় আতংকে দিন পার করছিলেন পদ্মার তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। গত ২২ মে সাড়াঘাট এলাকায় সরকারি অনুমোদন নিয়ে বালি উত্তোলনকে কেন্দ্র করে কাঁকনবাহিনীর গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন ঈশ্বরদী উপজেলা যুবদলের আহবায়ক সুলতান আলী বিশ্বাস টনির ৭-৮ জন সমর্থক। সে ঘটনার ঠিক দুদিন পরই চরের জমিতে চাষাবাদ ও আধিপত্য বিস্তারের জন্য ৮ জন কৃষককে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করেন কাকনবাহিনীর সমর্থকরা।
গত ৫ জুন সাড়ার ইসলামপাড়া ঘাটের বালির খোলায় প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ফিল্ম স্টাইলে গুলিবর্ষণ করে ব্যাপক লুটপাট ও আতংক সৃষ্টি করেন কাকনবাহিনীর লোকজন। তারপর গত ৬ অক্টোবর সাড়ার ক্যানেলপাড়া এলাকায় নৌ-চ্যানেলের খাজনা আদায়কে কেন্দ্র করে "এটি এন্টারপ্রাইজের" স্বত্তাধিকারী মেহেদী হাসানের লোকজনের উপর অতর্কিত গুলিবর্ষণ করেন কাকনবাহিনী। এসময় স্থানীয় সজিব ও নিজাম নামে দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে এখনও চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে।
সর্বশেষ গত ২৭ অক্টোবর রাজশাহীর বাঘা ও কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্তের ১৪ হাজার মাঠ নামে চাকলার চরে কাকনবাহিনীর গুলিতে আমান মন্ডল ও নাজমুল মন্ডলসহ আরো তিনজন নিহত হন। এ ঘটনার পরই প্রশাসনের যৌথবাহিনী "অপারেশন ফাস্ট লাইট" অভিযান পরিচালনা করে কাকনবাহিনী, মন্ডলবাহিনী, টুকু বাহিনী, লালচাঁদ বাহিনীসহ মোট ১১ টি সন্ত্রাসী বাহিনীর ৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এর মধ্যে রাজশাহীর ১৪ জন, পাবনার ২৪ জন, কুষ্টিয়া ও নাটোরের ২০ জন রয়েছেন। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমান দেশীয় অস্ত্র, ১০ টি আগ্নেয়াস্ত্র-গুলি, মাদক ও ৫ টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।
রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ে আজ রবিবার বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে এক প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ শাজাহান।
এসময় তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পদ্মার চর এলাকায় এসব সন্ত্রাসীবাহিনী কথায় কথায় গুলি, মানুষ হত্যা, চরের জমি দখল ও ফসল লুট, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ নানা সন্ত্রাসী কার্যক্রম বিস্তার করে আসছিল। সাধারন মানুষকে স্বস্তি দিতে ও তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধে এ অভিযান করা হয়েছে। পদ্মার তীরবর্তী এলাকার মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভবিষ্যতেও আমাদের এধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ঈশ্বরদী থানার ওসি মোঃ আ স ম আব্দুন নুর বলেন, অপারেশন ফাস্ট লাইট অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে অধিকাংশই পূর্বের বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী ছিলেন। এর মধ্যে ঈশ্বরদীতে গ্রেপ্তার২১ জনকে থানায় এনে আদালতে পাঠানো হয়েছে।




Comments