আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন নরসিংদীবাসী। আবার কখন ভূমিকম্প হয়। টানা তিনবার ভূমিকম্প নরসিংদীবাসী আগে কখনো দেখেনি। তারা বলছেন, সামনে যদি তার চেয়ে বেশি কম্পন হয় তবে অবস্থা কী হবে বলা মুশকিল। এমন আশঙ্কায় মানুষের ঘুম হারাম হওয়ার মতো অবস্থা।
জেলাবাসীর মনে এমনভাবে আতঙ্ক দেখা গেছে যে, গত শনিবার রাতে নরসিংদী শহরের বিভিন্ন বভন থেকে মানুষজন রাস্তায় নেমে পড়েছে। শহরের মানুষজন নরসিংদী সরকারি কলেজ মাঠ, জামিয়া কাসেমিয়া কামিল মাদরাসা মাঠ, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় মাঠসহ খোলা আকাশের নিচে রাস্তায় গভীর রাত পর্যন্ত অবস্থান করতে দেখা গেছে।
আতঙ্কগ্রস্ত মানুষদের খোঁজখবর নিতে শনিবার রাতেই বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকন রাস্তায় নেমে আসা বিভিন্ন মানুষের কাছে যান, তাদের খোঁজখবর নেন এবং আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন।
আনিকা খানম নামে একজন গৃহিণী বলেন, পুনরায় এ ভূমিকম্পে খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ছিলাম। এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল সব শেষ। আমি আমার শিশু সন্তানকে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতেই পারতেছিলাম না। হাত পা যেন কোনো কাজ করছিল না, মাথা ঝিম ঝিম করছিল, সঙ্গে বমি পাচ্ছিল। আমি আমার সন্তানকে নিয়ে খুবই ভয় পেয়ে ছিলাম। পুরো বিল্ডিং নড়তেছিল। শেষ পর্যন্ত রাত করেই খোলা আকাশের নিচে নিরাপদ আশ্রয়ে দীর্ঘক্ষণ ছিলাম।
হাবিব নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, রাতে দেখলাম মানুষ খোলা মাঠের দিকে যাচ্ছে। আমি ও পরিবার নিয়ে মাঠে এসেছি। মানুষের মাঝে ভূমিকম্পের ভয় বিরাজ করছিলো।
নরসিংদী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন বলেন, জেলায় প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। প্রায় শতাধিক লোক আহত হয়েছে। চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ের পর প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে।
নরসিংদীতে শনিবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী ভূমিকম্পন অনুভূত হয়েছে। এর আগে সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে এবং শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ভূমিকম্প হয়েছে। শুক্রবারের ভূমিকম্পে জেলার তিনটি উপজেলায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। বেশ কিছু সরকারি-বেসরকারি ও আবাসিক ভবনসহ শতাধিক ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। ভূমিকম্পের কারণে জেলার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পলাশ উপজেলায়। যার মধ্যে পলাশের খাদ্যগুদাম, পলাশ থানা ভবন, পলাশ উপজেলা পরিষদ ভবন, ফায়ার সার্ভিস ভবন, সমবায় উচ্চ বিদ্যালয়, ঘোড়াশাল মুসাবিন হাকিম ডিগ্রি কলেজ, চরসিন্দুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নুতন ও পুরাতন ভবন, রাবান উচ্চ বিদ্যালয়, ঘোড়াশাল পুরাতন রেলসেতুর একটি পিলারসহ প্রায় অর্ধশতাধিক ভবনের আংশিক ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়া নরসিংদী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা জজ কোর্ট, জেলা নির্বাচন অফিস, জেলা ত্রাণ গুদাম, নরসিংদী সরকারি কলেজ, নরসিংদী সরকারি মহিলা কলেজের হোস্টেল, গাবতলি জামিয়া কাসেমিয়া কামিল মাদরাসা, নরসিংদী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, হাজী মোসলে উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়সহ জেলায় শতাধিক ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে।




Comments