Image description

প্রায় দশ বছর যাবৎ দোকানদারি করতেছি, চোখের সামনে সেই দোকান নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন আমি কি করমু এই বয়সে, কি কইরা বাচ্চা-কাচ্চা নিয়া খামু, কি কইরা মহাজনে দেনা শোধ করমু। সুরমা নদীর ভাঙ্গনে নিজের দোকান ঘর হারিয়ে আক্ষেপ করে এই কথা বলেন জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নের মন্নানঘাট বাজারের ব্যবসায়ী ছানু মিয়া। 

তিনি জানান, মন্নানঘাট বাজার শুরু হওয়ার পর থেকে এই বাজারে ব্যবসা করে আসছেন। গেল এক মাস আগে সুরমার ভাঙ্গনে মন্নানঘাট বাজারের ছানু মিয়ার মতো আরো ৫ জনের দোকান হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। 

গত তিন মাসের মধ্যে ৬ টি দোকান ভেঙ্গে সবাই এখন কর্মবিমুখ। প্রায় ১৮ বছরের এই বাজারে প্রায় ১৮০ টি দোকান রয়েছে। এছাড়াও সবজি কেনা বেচার জন্য এই বাজারটি প্রসিদ্ধ। প্রতি বছর টমেটো, মরিচ, বেগুন, শশা সহ প্রায় শতকোটি টাকার বাণিজ্য এই বাজারে হয়ে থাকে। দ্রুত ভাঙ্গণ রোধে ব্যবস্থা না নিলে পুরো বাজারটি হুমকির মুখে। গত কয়েক মাসে ৬ টি দোকান বিলিন হয়ে গেছে।  

ভাঙ্গণের তীব্রতার কারণে অনেকে দোকান সরিয়ে নিচ্ছেন। সরজমিনে মন্নানঘাট-সংবাদপুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পানি কমার সাথে সাথে মাটি ভেঙ্গে আছড়ে পড়ছে। নদী ঘেরা দোকানপাটের ভিটেমাটি ধসে পড়েছে নদীর বুকে। 

সবচেয়ে বেশি ভাঙ্গণ চোখে পড়ে বাজারের পশ্চিম থেকে প্রায় ৫০ মিটার এলাকা জুরে, বাজারের পাশেই সংবাদপুর গ্রাম। এই গ্রামের প্রায় দেড়শত বাড়ি বছরের পর বছর নদীর ভাঙ্গণে অন্যত্র সরাতে হয়েছে। আরো ৮ থেকে ১০ টি পরিবার এবারেই ঘর ভেঙ্গে অন্যত্র সরাতে হবে। মন্নানঘাট বাজারের দোকান মালিকদের অভিযোগ ভাঙ্গণ প্রতিরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ কাজ ধীর গতিতে করার কারণে তারা এই ভাঙ্গণের কবলে পড়েছেন। 

তারা জানান, মন্নানঘাট বাজারে ভাঙ্গণ রোধে পানি উন্নয়ন বস্তা ফেলার জন্য টেন্ডার হয়ে ওয়ার্ক অর্ডার হয়েছে। ঠিকাদার এসে মাপযোগ করে লাল নিমান টাঙ্গিয়ে গেছে। তারপর থেকে আজ অবদি ঠিকাদারের দেখা মেলেনি। যার কারণে এপর্যন্ত ৬ টি দোকান ভেঙ্গে গেছে, আরো ৪ টি দোকান হুমকির মুখে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, মন্নানঘাট বাজারের ভাঙ্গন রোধের জন্য গত জুলাই মাসে ৪০ মিটার এলাকায় ২৯ লক্ষ টাকা জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার জন্য দেওয়া হয়েছে। কাজটি করার জন্য মেসার্স হাসান এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার ইকবাল হাসানকে দেওয়া হয়েছে। 

এব্যাপারে মন্নানঘাট-সংবাদপুর বাজার কমিটির সভাপতি মোঃ আলী আমজাদ জানান, কয়েক মাসের মধ্যে পানি কমার সাথে সাথে একের পর এক দোকান ভিট ভেঙ্গে নদীর গর্বে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। ইতি মধ্যে ৬ টি দোকান ভিট ভেঙ্গে প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। দুই মাস আগে ঠিকাদার এসে জায়গায় মেপে লাল নিশান টাঙ্গিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত কাজ শুরু করেনি। যার কারণে প্রতিদিন পানি কমছে ৩ থেকে ৫ ফুট করে ভেঙ্গে পড়ছে। দ্রুত কাজটি না করা হলে অচিরেই আরো কয়েকটি দোকান নদীতে বিলিন হয়ে যেতে পারে। আমি উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি দ্রুত কাজটি সম্পন্ন করে নদী ভাঙ্গণ রোধ করার জন্য। 

মেসার্স হাসান এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার ইকবাল হাসান জানান, মন্নানঘাট ভাঙ্গণ রোধের সাইডে জিও ব্যাগ পাটানো হয়েছে। আশা করি আগামী সাপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু হবে। 

উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ জাহিদুল ইসলাম জনি জানান, উপজেলার মন্নানঘাট নদী ভাঙ্গনের কারণে স্থানীয় লোকজনের আবেদনের প্রেক্ষিতে তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সিলেট, নির্বাহী প্রকৌশলী, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট শাখা কর্মকর্তা মন্নানঘাট বাজারের নদী ভাঙ্গণ পরিদর্শন করেন। তার প্রেক্ষিতে জরুরি ভিত্তিতে ইমার্জেন্সি কাজ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে টেন্ডারের মাধ্যমে মেসার্স হাসান এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার ইকবাল হাসানকে জরুরি ভিত্তিতে ঐ কাজের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করে ওয়ার্ক অর্ডার প্রদান করা হয়। ঠিকাদারকে কাজ শুরু করার নির্দেশ প্রদান করা হলেও বিভিন্ন ওজুহাতে কাজটি শুরু করতে বিলম্ব করছে। ইতিমধ্যে ঠিকাদারের সাথে আলাপ করে জানা যায় মালামাল সংগ্রহ করছে। আগামী মাসের মধ্যেই কাজটি করা সম্ভব হবে আশা করছি।