Image description

বাংলাদেশের মতো প্রধান আমদানিকারক দেশগুলো মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় বড়সড় মন্দার কবলে পড়েছে ভারতের পেঁয়াজের বাজার। অভ্যন্তরীণ বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভারতের ঘনঘন রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মতো বড় ক্রেতারা এখন পাকিস্তান, চীন, ইয়েমেন ও ইরানের মতো বিকল্প বাজারের দিকে ঝুঁকেছে। ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘ইকোনোমিক টাইমস’-এর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানিকারকদের দুর্দশার জন্য দেশটির সরকারের অস্থির রপ্তানি নীতিকেই দায়ী করা হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভারত গত কয়েক বছরে একাধিকবার হুট করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে আমদানিকারক দেশগুলো ভারতের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প উৎসের সন্ধান করেছে এবং নিজস্ব উৎপাদন বাড়াতে মনোযোগী হয়েছে।

একসময় ভারত তার মোট পেঁয়াজ রপ্তানির একটি বিশাল অংশ বাংলাদেশে পাঠাত। ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও ভারত বাংলাদেশে ৭ দশমিক ২৪ লাখ টন পেঁয়াজ রপ্তানি করেছিল, যা তাদের মোট রপ্তানির ৪২ শতাংশ। অথচ চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশ ভারত থেকে মাত্র ১২ হাজার ৯০০ টন পেঁয়াজ আমদানি করেছে।

মূলত স্থানীয় কৃষকদের সুরক্ষা দিতে এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ এখন ভারত বিমুখ। ভারতের পেঁয়াজ বীজ ব্যবহার করে বাংলাদেশসহ অন্য দেশগুলো উৎপাদনে স্বনির্ভর হয়ে উঠছে, যা ভারতীয় কৃষকদের দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।

কেবল বাংলাদেশই নয়, সৌদি আরবও গত এক বছর ধরে ভারত থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পেঁয়াজ কিনছে না। ভারতীয় রপ্তানিকারকরা জানান, ইয়েমেন ও ইরান থেকে কম দামে পেঁয়াজ পাওয়ায় সৌদি আরব এখন সেদিকেই ঝুঁকছে। ফিলিপাইনও এখন চীনের ওপর নির্ভর করছে।

ভারতের জ্যেষ্ঠ পেঁয়াজ আমদানিকারক অজিত শাহ বলেন, ‘‘আমাদের পেঁয়াজের গুণগত মান ভালো হওয়ায় আমরা ভালো দাম পেতাম। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে যখন আমরা বাজারে ছিলাম না, তখন ক্রেতারা বিকল্প খুঁজে নিয়েছে। এখন ক্রেতারা আর মানের দিকে তাকাচ্ছে না, তারা দেখছে কারা কম দামে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ দিতে পারছে।’’

বোর্ড অব ট্রেডের সদস্য পাশা প্যাটেল সতর্ক করে বলেন, ‘‘আমরা শুধু আমাদের ঐতিহ্যবাহী ক্রেতাদেরই হারাইনি, বরং তারা এখন ভারতের বীজ ব্যবহার করে নিজেরাই স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠছে। এটি ভারতের পেঁয়াজ খাতের জন্য অশনিসংকেত।’’