Image description

উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে নীলফামারীতে তৃতীয় লিঙ্গের দুই নারীর পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা পরিষদ। পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে সদর উপজেলার গোড়গ্রাম ইউনিয়নের ধোবাডাঙ্গা এলাকার দুই বোন সুফিয়া আক্তার ও সাবিনা আক্তারকে স্থায়ীভাবে জমি, দোকান ঘর এবং ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় মালামাল প্রদান করা হয়েছে।

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেলে ভবানীগঞ্জ বাজারে জেলা পরিষদের অর্থায়নে নির্মিত এই প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিকভাবে দুই বোনের কাছে হস্তান্তর ও ব্যবসায়িক কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদের প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান।

আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ ও বিশেষ এই উপহার পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সুফিয়া আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমরা ৫ ভাই-বোন, সব মিলিয়ে সংসারে সদস্য ১৩ জন। বাবা সুরুজ আলী কৃষিকাজ করে কোনোমতে সংসার চালান। সরকারি ভাতার বাইরে আমাদের আর কোনো আয় ছিল না। জেলা পরিষদ আমাদের জমি, দোকান ঘর এবং ব্যবসার মালামাল দিয়ে যে সহায়তা করল, তাতে আমরা যেন নতুন জীবন ফিরে পেলাম।’

সুফিয়া ও সাবিনার বাবা সুরুজ আলী বলেন, ‘আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না যে আমার দুই মেয়ে আজ এভাবে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে জড়িত হবে। এতে আমাদের সংসারে যেমন স্বচ্ছলতা ফিরবে, তেমনি তারা সমাজের বোঝা না হয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে।’

অনুষ্ঠানে সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু বকর সিদ্দীক বলেন, ‘সমাজসেবা কার্যালয়ের আওতায় তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তারা এগোতে পারছিল না। জেলা পরিষদ তাদের পাশে দাঁড়িয়ে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল, তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’

জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দীপঙ্কর রায় জানান, পিছিয়ে পড়া ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষকে মূল স্রোতে ফিরিয়ে এনে তাদের জীবনমান উন্নয়নে জেলা পরিষদ কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের স্বাবলম্বী করতে গবাদি পশু ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। সুফিয়া ও সাবিনা সারাদেশে মডেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা চাই না সমাজের কোনো গোষ্ঠী পিছিয়ে থাকুক। মূল স্রোতের মানুষরা যেভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরাও যেন সেভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শেখে। জেলা পরিষদ কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও উদ্যোক্তা তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে।’

উদ্বোধন শেষে সুফিয়া ও সাবিনার দোকানের প্রথম ক্রেতা হিসেবে পণ্য ক্রয় করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান এবং দ্বিতীয় ক্রেতা ছিলেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দীপঙ্কর রায়।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রবেশন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন, সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন ও নীলফামারী প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আতিয়ার রহমান।