সুনামগঞ্জের ছাতকে অনলাইন জুয়ার হটস্পট হিসেবে পরিচিত হয়ে উটেছে উপজেলার অন্যতম ব্যবসায়িক কেন্দ্র জাউয়াবাজার ও গোবিন্দগঞ্জ ও ছাতক পৌরশহর। শক্তিশালী এজেন্ট সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অনলাইন জুয়ার ফাঁদ পেতে আসক্তদের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র।
ওয়ান এক্স বেট, ক্যাসিনো, শিলং তীরসহ বিভিন্ন জুয়ার লোভনীয় ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছেন উঠতি বয়সী তরুণ-যুবকরা। অনলাইন জুয়ার এজেন্টদের খপ্পরে পড়ে অনেকেই হারিয়েছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, চাকরি, জমিজমা। দেনার দায়ে ঘরছাড়া হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে কেউ কেউ।
এছাড়া সব কিছু হারিয়ে মদ-গাজা, ইয়াবা সেবন সহ চুরি ডাকাতির মত কর্মকাণ্ডে আসক্ত হয়ে পড়ছে অনেকেই। সম্প্রতি জাউয়াবাজারের আনাচে কানাচে বেড়েছে মাদক সেবন ও বিক্রেতার হার। উপজেলাজুরে বেড়েছে মটরসাইকেল, সিএনজি চুরি সহ নানা অপরাধ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনলাইন জুয়াড়িদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে জাউয়াবাজার। এই এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী অনলাইন জুয়ার এজেন্ট হিসেবে যুক্ত রয়েছেন। ভুক্তভোগীদের তথ্য ও অনুসন্ধানে মিলেছে স্থানীয় বাজারের অন্তত ডজনখানেক ব্যবসায়ী ও যুবকদের সম্পৃক্ততা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একধিক ভুক্তভোগী জানান, অনলাইন জুয়ার ‘ডন’ হিসেবে পরিচিত রয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল বাছির। যিনি ‘সুপার এজেন্ট’ হিসেবে জাউয়াবাজার এলাকার অনলাইন জুয়া নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। তিনি অনলাইন ব্যবসায় বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রতিমাসে কয়েক কোটি টাকার ট্রানজেকশন করেন। মোবাইল ব্যাংকিংসহ স্থানীয় একাধিক ব্যাংকে অস্বাভাবিক লেনদেন করেন। এই কাজের মাধ্যমে কয়েক বছরে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন আব্দুল বাছির।
এছাড়া সাবেক সিএনজি চালক রুবেল অনলাইন জুয়ার এজেন্ট তিনি একটি বাড়িতে গড়ে তুলেছেন জোয়ার আসর। শুন্য থেকে তিনি এখন কয়েকটা সিএনজি ও মাইক্রোবাসের মালিক।
এক সময় অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িত ছিলেন স্বীকার করে রুবেল জানিয়েছেন, বর্তমানে তিনি এসব কাজে নেই। তার আয়ের উৎস জানতে চাইলে মাইক্রোবাস সিএনজিসহ বেশ কয়েকটা গাড়ির কথা নিশ্চিত করেন। তবে বাছিরের সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করেও কোনো সারা পাওয়া যায়নি। মোবাইলে খুদে বার্তা পাটিয়েি উত্তর মিলেনি।
তবে আব্দুল বাসিরের এক সহযোগির সাথে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেন সোহাগ হাসান নামের স্থানীয় জুয়ারি। ডিপি’ লাগবে এমন মেসেজের উত্তরে তিনি দেন ‘সুপার এজেন্ট’ আব্দুল বাছিরের নাম্বার। এরপর তার ব্যবহৃত দুটি মোবাইলে কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে তার সম্পৃক্ততার বিষয় জানতে চাইলেও কোনো উত্তর মিলেনি।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, জুয়ার এজেন্ট হিসেবে ডিপোজিট বিক্রি করে রাতারাতি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন রকি নামের স্থানীয় এক যুবক। এক সময়ের বেকার রকি সম্প্রতি বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয় করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন স্থানীয়দের। তার আয়ের উৎস নিয়েও চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তবে রকি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তার আর্থিক পরিবর্তনে রয়েছে তার প্রবাসী স্বজনদের হাত।
এছাড়া অনলাইন জুয়া এজেন্ট হিসেবে রয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী কামরুল ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ফয়েজ নামের দুই ভাই। জুয়ার এজেন্টের ব্যবসা করে অল্পদিনের মধ্যেই আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন করেছেন তারা।
সম্প্রতি অর্ধ কোটি টাকা ব্যয় করে বিলাসবহুল বাড়ি বানিয়েছেন কামরুল। চড়েন বেড়ান বিলাসবহুল গাড়িতে।
এ ব্যাপারে কামরুলের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অনলাইন জুয়ায় সম্পৃক্ত নন বলে জানান। তিনি বলেন, রাজনৈতিক কারণে তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনা হচ্ছে।
এছাড়া ছাতক পৌরশহরের আনাচেকানাচেও একাধিক অনলাইন জুয়ার এজেন্ট রয়েছে।
গোবিন্দগঞ্জ একাকায় রেললাইন লালপুল সহ বিভিন্ন জায়গায় চলে অপেন জুয়ার আসর। অনলাইন জুয়া যেন এখন অপেন সেক্রেট সেখানে।
মিনহাজ (ছদ্মনাম) নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, আমি অনলাইন জুয়ার ফাঁদে পড়ে আমার ক্যারিয়ার ধ্বংস করে ফেলেছি। আব্দুল বাছির জাউয়া বাজারের সবচেয়ে বড় এজেন্ট। কামরুল, রকি, হাবিব, শাহীন এদের মাধ্যমে আমি লেনদেন করেছি। এই জুয়ার কারণে আমি মোটরবাইক, আইফোন ও দোকান খুইয়েছি। এখনো সাত লাখ টাকা ঋণ রয়েছে আমার। আমি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত। অভিযুক্তদের নামে বেনামে বিকাশে রকেট ও ব্যাংক একাউন্ট রয়েছে। এসবের মাধ্যমে অসাভাবিক লেনদেন হয়ে থাকে। এছাড়া আত্মীয়স্বজন, স্ত্রী, ভাই-বোন, কাছের বন্ধুবান্ধবের নামেও বিভিন্ন ওয়েতে লেনদেন করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাজনৈতিক নেতা বলেন, জাউয়াবাজার এখন জুয়াড়িদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এই বাজারের কিছু ব্যবসায়ী ও স্থানীয় যুবক এই ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত। অনেকেই রাতারাতি বাড়ি-গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছেন। তদন্ত করলে সবকিছু বেরিয়ে আসবে।
এ ব্যাপারে জাউয়াবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হযরত আলী বলেন, আমাদের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ছাতক থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, যদিও সাইবার টিম ব্যতীত এসব বিষয় শনাক্ত করা কষ্টকর,কিন্তু পুলিশ অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।




Comments