Image description

খুলনার বেতগ্রাম-কয়রা আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। জমি অধিগ্রহণে জটিলতা, আইনি দীর্ঘসূত্রিতা এবং প্রভাবশালী মহলের অবৈধ স্থাপনা অপসারণে ব্যর্থতার কারণে বারবার হোঁচট খাচ্ছে এই প্রকল্প। সর্বশেষ পাইকগাছার কপিলমুনি বাজার এলাকায় ‘ভুল নকশায়’ উচ্ছেদ অভিযান চালানো নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটি প্রকৃত অর্থে সোজা না করলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্থানীয়রা।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা যায়, খুলনার তিনটি ও সাতক্ষীরার একটি উপজেলার ওপর দিয়ে বিস্তৃত বেতগ্রাম-তালা-কপিলমুনি ও পাইকগাছা-কয়রা আঞ্চলিক সড়ককে দুই লেনে উন্নীত করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয় ২০২০ সালে। প্রায় ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের ৩৪টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সরলীকরণের কথা থাকলেও গত পাঁচ বছরে দুই দফায় সময় ও ব্যয় বাড়ানোর পরও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।

সম্প্রতি কপিলমুনি বাজার এলাকার বাঁক সরলীকরণ নিয়ে জটিলতা চরমে পৌঁছেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সওজ কর্তৃপক্ষ ভুল ও পক্ষপাতদুষ্ট নকশায় উচ্ছেদ চালাচ্ছে। এতে সড়কটি সোজা হওয়ার পরিবর্তে নতুন করে আরও দুটি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকের সৃষ্টি হবে। ফলে কপিলমুনি সরকারি হাসপাতাল ও সিনিয়র ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার সামনে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যাবে।

গত ৬ ডিসেম্বর বর্তমান নকশা অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলে এলাকাবাসীর তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে সওজ। দুদিনের অভিযানে কপিলমুনি সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার একটি দোতলা ভবন ভেঙে দেওয়া হয়। তবে বিক্ষোভের মুখে কর্তৃপক্ষ কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়।

স্থানীয়দের দাবি, সড়কের উল্টো পাশে থাকা একটি প্রভাবশালী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভবন রক্ষা করতেই মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে। অথচ ওই ভবনটির অংশ অপসারণ করলে সড়কটি সম্পূর্ণ সোজা হতো এবং সরকারের কোটি কোটি টাকার অধিগ্রহণ ব্যয়ও সাশ্রয় হতো।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন করেছেন। জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান এবং পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে ফকিরবাসা মোড়ের বাঁক সরলীকরণে অনৈতিক সুবিধাভোগী চক্রের সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠে আসে। এছাড়া মাদরাসার অধিগ্রহণের অর্থ আত্মসাতের চেষ্টার বিষয়টিও আলোচনায় আসে।

গণশুনানিতে খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপংকর দাশ এবং সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তানিমুল হক সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে নকশা পরিবর্তন না করে উচ্ছেদ অব্যাহত রাখার ইঙ্গিতে পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

এলাকাবাসী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, উন্নয়নের স্বার্থে জমি দিতে তাদের আপত্তি নেই, কিন্তু সড়ক অবশ্যই সঠিক নকশায় ও প্রকৃত অর্থে সোজা হতে হবে। তা না হলে গণঅনাস্থা ও কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তারা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।