যুবলীগ নেতাকে ছাড়াতে ব্যর্থ হয়ে থানার ভেতরে সাংবাদিকদের পেটালেন বিএনপি নেতা
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতেই থানার ভেতরে সাংবাদিকদের ওপর পরিকল্পিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। আটক হওয়া এক নিষিদ্ধ সংগঠনের যুবলীগ নেতাকে ছাড়াতে না পেরে ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে দুই সাংবাদিককে প্রকাশ্যে মারধর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক বিএনপি নেতা ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাতের দিকে ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার চত্বরে এ বর্বরোচিত ঘটনা ঘটে। হামলায় আহত সাংবাদিকরা হলেন- দৈনিক নয়া দিগন্তের মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার রাসেল শিকদার এবং এশিয়ান টেলিভিশনের স্থানীয় প্রতিনিধি রুহুল আমীন জুয়েল। আহতদের উদ্ধার করে ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর অংশ হিসেবে শনিবার সন্ধ্যায় উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেনকে আটক করে সখিপুর থানা পুলিশ। তাকে ছাড়িয়ে নিতে সখিপুর থানা বিএনপির সদস্য সচিব মাজহারুল ইসলাম সরদার সহযোগীদের নিয়ে থানায় উপস্থিত হন। তিনি পুলিশকে সরাসরি চাপ দিয়ে আটক ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানান। তবে পুলিশ আইনি প্রক্রিয়ার কথা জানিয়ে তাকে ছাড়তে অস্বীকৃতি জানালে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
এ সময় থানায় উপস্থিত সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করলে বিএনপি নেতা মাজহারুল ইসলাম সরদার ও তাঁর সহযোগীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে তাঁরা সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে সাংবাদিকদের কিল–ঘুষি মেরে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় এবং তাঁদের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়।
আহত সাংবাদিক রাসেল শিকদার বলেন, “আমরা তথ্য সংগ্রহ করছিলাম। আটক যুবলীগ নেতাকে আমাদের কারণে ছাড়ানো যায়নি এমন অমূলক অভিযোগে আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। থানার ভেতর এমন হামলা চরম ধৃষ্টতা।”
অপর সাংবাদিক রুহুল আমীন জুয়েল বলেন, “পুলিশের সামনে এভাবে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হবে, তা ভাবতেও পারিনি। আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে মারধর করা হয়েছে।”
এ বিষয়ে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা মাজহারুল ইসলাম সরদারকে ফোন করা হলে তিনি হামলার বিষয়ে সরাসরি কোনো সদুত্তর না দিয়ে প্রতিবেদককে চা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানান। তবে মারধরের অভিযোগের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
সখিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দীন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “আটক যুবলীগ নেতাকে ছাড়াতে এসে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি নেতা মাজহারুল ইসলাম সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেন। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান কিরণ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, “আওয়ামী লীগের দোসরদের পক্ষে যদি কেউ থানায় গিয়ে থাকে এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলায় জড়িত হয়, তবে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
থানার ভেতরে সাংবাদিকদের ওপর এমন হামলাকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। সচেতন মহলের দাবি, দ্রুত এই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।




Comments