ঢাকার ধামরাইয়ে রূপা আক্তার (২৫) নামে এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যুকে ঘিরে এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার পেছনে নিহতের দেবর ও পুলিশ সদস্য শাওন হাসানের সাথে দীর্ঘদিনের অনৈতিক সম্পর্ক এবং হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তুলেছে নিহতের পরিবার। ৪ বছরের শিশুসন্তানের লোমহর্ষক বর্ণনা এবং প্রতিবেশীদের বক্তব্যে ঘটনাটি এখন পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের দিকে মোড় নিয়েছে।
নিহত রূপা আক্তার ধামরাইয়ের আমরাইল রামভদ্রপাড়া এলাকার মো. জাকির হোসেনের স্ত্রী। গত ২৮ নভেম্বর রাতে উপজেলার বাইশাকান্দা ইউনিয়নের বাগাইর এলাকায় একটি ভাড়া বাসা থেকে তাঁর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে জাকির হোসেনের সাথে রূপার বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই জাকিরের চাচাতো ভাই এবং বর্তমানে পুলিশে কর্মরত শাওন হাসানের সাথে রূপার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ নিয়ে এলাকায় একাধিকবার বিচার-সালিশ হলেও শাওন রূপার পিছু ছাড়েননি। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ ও টিকটক ভিডিওতে তাঁদের প্রেমের সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সংসার ও সামাজিক সম্মান বাঁচাতে জাকির হোসেন প্রায় ছয় মাস আগে নিজের বাড়ি ছেড়ে বাগাইর এলাকায় ভাড়া বাসায় ওঠেন। জাকির স্থানীয় একটি সিরামিক কারখানায় কাজ করতেন। তবে অভিযোগ রয়েছে, ঠিকানা বদলালেও শাওন সেখানে নিয়মিত যাতায়াত করতেন।
ঘটনার আগের রাতে (২৭ নভেম্বর) জাকির হোসেন কর্মস্থলে থাকায় রূপা বাসায় একা ছিলেন। এক প্রতিবেশী নারী জানান, ওই রাতে তিনি শাওনকে রূপার সাথে টানাটানি ও ধস্তাধস্তি করতে দেখেন। বাধা দিলে শাওন দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন এবং রূপা বিষয়টি গোপন রাখতে প্রতিবেশীকে অনুরোধ করেন। এর ঠিক পরদিন রাতেই রূপার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ঘটনার দুই দিন পর নিহতের ৪ বছরের কন্যা জিমহার বক্তব্যে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। শিশুটি জানায়, "শাওন এসে মায়ের গলা টিপে ধরে রশি দিয়ে মেরে ফেলেছে। আমি কান্না করলে আমাকে ধমক দিয়ে ঘুমাতে বলেছে। আমি শাওনের পায়ে কামড় দিয়েছিলাম।" অবুঝ এই শিশুর এমন বর্ণনা হত্যাকাণ্ডকে আরও জোরালো করেছে।
নিহতের স্বামী জাকির হোসেনের অভিযোগ, ঘটনার পর ধামরাই থানায় হত্যা মামলা করতে চাইলেও পুলিশ তা আমলে নেয়নি। বাধ্য হয়ে তিনি ধামরাইয়ের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত ১০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিলেও পুলিশের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই বলে অভিযোগ জাকিরের।
জাকির হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, "শাওন পুলিশ সদস্য বলেই কি আমার স্ত্রী হত্যার বিচার পাব না? সে আমার সংসার শেষ করে দিয়েছে। এখন আমার নিষ্পাপ সন্তানকে কে দেখবে? আমি এই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।" নিহতের বোন সুবর্ণা আক্তারও একই অভিযোগ তুলে ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য শাওন হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। হোয়াটসঅ্যাপ স্ক্রিনশট ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো সদুত্তর না দিয়েই ফোন কেটে দেন।
ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নাজমুল হুদা খান বলেন, "আদালত এই ঘটনায় ধামরাই থানায় কোনো অপমৃত্যুর মামলা বা জিডি হয়েছে কি না, তা জানতে চেয়েছিলেন। আমরা আমাদের কাছে থাকা তথ্য প্রতিবেদন আকারে আদালতে জমা দিয়েছি।" তবে তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।
নিহতের পরিবারের আশঙ্কা, অভিযুক্ত প্রভাবশালী হওয়ায় এবং পুলিশ সদস্য হওয়ায় মামলাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সত্য উদ্ঘাটন এবং ন্যায়বিচারের দাবিতে এখন প্রশাসনের উচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকাবাসী।




Comments