Image description

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে এক বীরোচিত পরিবেশে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ৩০০ ফিট (পূর্বাচল) এলাকায় আয়োজিত বিশাল গণসংবর্ধনা সমাবেশে তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। কিংবদন্তি মার্টিন লুথার কিংয়ের বিখ্যাত উক্তির অনুকরণে তিনি ঘোষণা করেন, ‘আই হ্যাভ আ প্ল্যান ফর দ্য পিপল অব মাই কান্ট্রি, ফর মাই কান্ট্রি’ (আমার দেশের মানুষের জন্য, আমার দেশের জন্য আমার একটি পরিকল্পনা আছে)।

লন্ডন থেকে দীর্ঘ পথ ভ্রমণ করে আসলেও তারেক রহমানের চোখে-মুখে ক্লান্তির কোনো ছাপ ছিল না। বিমানবন্দর থেকে বাসে করে আসার পুরো পথটি তিনি দাঁড়িয়ে থেকে রাস্তার দুই পাশে অপেক্ষমাণ লাখো নেতাকর্মীর অভিবাদনের জবাব দেন। বিকেল নাগাদ সংবর্ধনা মঞ্চে পৌঁছে তিনি কোনো লিখিত স্ক্রিপ্ট ছাড়াই টানা ১৬ মিনিট এক তেজস্বী ভাষণ প্রদান করেন। সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট ও চশমা পরিহিত তারেক রহমানের এই ভাষণের সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির শীর্ষ নেতাসহ জোট শরিক দলের শীর্ষ নেতারা।

তারেক রহমান তার ভাষণে স্পষ্ট করেন যে, তার এই পরিকল্পনা ব্যক্তিগত কোনো ক্ষমতার জন্য নয়, বরং দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য। তিনি বলেন, “এই পরিকল্পনা দেশের মানুষের স্বার্থে, উন্নয়নের জন্য এবং ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য। এটি বাস্তবায়ন করতে দেশের গণতন্ত্রকামী সব মানুষের সহযোগিতা আমার প্রয়োজন। আপনারা যদি পাশে থাকেন, তবেই আমরা এই পরিকল্পনা সফল করতে পারব।”

একটি নিরাপদ ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারেক রহমান বলেন, “আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন একজন মা দেখেন। অর্থাৎ একটি নিরাপদ বাংলাদেশ; যেখানে মানুষ ঘর থেকে নিরাপদে বের হয়ে আবার নিরাপদে ফিরে আসার নিশ্চয়তা পাবে।” তিনি আরও যোগ করেন যে, মানুষ এখন তাদের কথা বলার অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার এবং মেধা অনুযায়ী ন্যায্য অধিকার ফিরে পেতে চায়।

বক্তৃতার শুরুতে তারেক রহমান মহান আল্লাহ তায়ালার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকগুলো স্মরণ করেন। তিনি বলেন, “১৯৭১-এ শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতা, ৭৫-এর সিপাহি-জনতার বিপ্লব, ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লব—সবই আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াই। এখন সময় এসেছে সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ গড়ার।”

তারেক রহমানের এই ভাষণ ও প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে পুরো রাজধানীজুড়ে এক অভূতপূর্ব উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। সংবর্ধনা মঞ্চ ছাড়িয়ে জনস্রোত কয়েক কিলোমিটার বিস্তৃত হয়ে পড়েছিল, যা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।