অবৈধ নিয়োগে স্বাক্ষর নিতে প্রধান শিক্ষক ‘অপহরণ’, তোলপাড় বদলগাছীতে

নওগাঁর বদলগাছীতে বামনপাড়া টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের সুপারিনটেনডেন্ট মো. হুমায়ুন রেজা খানকে অপহরণ করে জোরপূর্বক অবৈধ নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানের সাবেক পরিচালনা কমিটির সভাপতি বশির উদ্দিন ও তার ছেলে বুলেট হোসেনসহ ৮-১০ জনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় শিক্ষক সমাজ, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটার দিকে হুমায়ুন রেজা খান মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার সন্ন্যাসতলা এলাকায় পৌঁছলে বশির উদ্দিন, তার ছেলে বুলেট হোসেন, চক কামাল এলাকার মো. হাবিব হোসেনসহ আরও কয়েকজন তার পথ রোধ করে। তারা তাকে জোরপূর্বক একটি অটোচার্জার গাড়িতে তুলে জয়পুরহাট সদরের সবুজনগড় এলাকার একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে মারধর ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তিনজন কর্মচারীর নিয়োগপত্র, যোগদানপত্র ও এমপিওভুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়। পরে রাত ৭টার দিকে তাকে জয়পুরহাট রেলস্টেশন এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী হুমায়ুন রেজা খান জানান, “২০২২ সালে আমি এই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করি। তখন বশির উদ্দিন সভাপতি ছিলেন। যোগদানের পর দাপ্তরিক কাগজপত্র চাইলেও তিনি কখনও তা বুঝিয়ে দেননি। ২০২৩ সালে তিনি একক ক্ষমতায় তিনজন কর্মচারীর নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন এবং নিয়োগ বোর্ড গঠন করেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তাদের নিয়োগ সম্পন্ন হয়নি। এরই মধ্যে আমাকে অপহরণ করে নৈশ প্রহরী বাঁধন হোসেন, আয়া ফারজানা ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী জালাল হোসেনের নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়।”
তিনি আরও বলেন, “এখন থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া সরকারি নিয়মে সম্পন্ন হবে। সম্ভবত এই কারণে তারা এই তিনজনের নিয়োগ বৈধ করতে আমাকে অপহরণ করেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই। বর্তমানে আমি আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।”
প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী মোস্তফা জানান, “ওই তিনজন মাঝে মাঝে স্কুলে আসতেন। তারা নিয়োগ পেয়েছেন বলে দাবি করলেও কখনও নিয়োগপত্র দেখাননি বা হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেননি।” একই কথা জানান ইংরেজি শিক্ষক আতিকুর রহমান ও এনামুল হকসহ অন্যান্য শিক্ষকরা।
অভিযুক্ত নৈশ প্রহরী বাঁধন হোসেন মুঠোফোনে বলেন, “অপহরণের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমার বেতন হয়নি, তাই সপ্তাহে একদিন স্কুলে যাই। বাকি দিন অন্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। ২০২৪ সালে আমার নিয়োগ হয়েছে।” তিনি বর্তমানে গোপালপুর বাজারে থাকার কথা জানান।
স্থানীয় বাসিন্দা পলাশ হোসেন বলেন, “এই ঘটনা শুধু একটি স্কুলের নয়, পুরো শিক্ষাঙ্গনের নিরাপত্তা ও স্বচ্ছ নিয়োগ ব্যবস্থার ওপর প্রশ্ন তুলেছে। শিক্ষাকে বাণিজ্যিক স্বার্থের জালে ফেলা বন্ধ না করলে এমন ঘটনা আরও বাড়বে।”
বশির উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তার ছেলে বুলেট হোসেন অপহরণের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এটি সত্য নয়।” এরপর তিনি ফোন কেটে দেন এবং পরবর্তীতে যোগাযোগের চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ আনিছুর রহমান বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি এবং তদন্ত চলছে। নিয়োগ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে।” উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান ছনি জানান, “আমি বিষয়টি শুনেছি। ছুটির কারণে বিস্তারিত জানতে পারিনি। আজ থেকে অফিস শুরু করেছি, পরে বিস্তারিত জানাতে পারব।”
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী গত বৃহস্পতিবার রাতে বদলগাছী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন এবং মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও ইউএনওকে মৌখিকভাবে অবহিত করেছেন। শিক্ষাঙ্গনে এমন ঘটনা নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
Comments