Image description

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন মো. জাহাঙ্গীর আলম। অবশ্য ঋণখেলাপির দায়ে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। তবে তার মা জায়েদা খাতুনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর থেকে একের পর এক সরকার ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে যাচ্ছিলেন বহিষ্কৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। এরই প্রেক্ষিতে তাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।
 
তারা বলেন, গঠনতন্ত্র, নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি কোনো কার্যকলাপে সম্পৃক্ত না হওয়ার অঙ্গীকারের পরিপ্রেক্ষিতে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কিন্তু গাজীপুর সিটি নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন, যা তার লিখিত অঙ্গীকারের পরিপন্থি। এ অবস্থায় তাকে দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে তার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের যোগসূত্র আছে কী না তাও খতিয়ে দেখা দরকার। 
 
এদিকে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খানের সঙ্গে দলের নির্বাচন পরিচালনা সমন্বয় টিম বৈঠক করে। সেই বৈঠকে এসব দাবি জানান সমন্বয় টিমের সদস্যরা।
বৈঠক সূত্র মতে, মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় আপিল করতে পারেন জাহাঙ্গীর। তবে তাকে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খানের পক্ষে কাজ করতে বলা হচ্ছে। এটি না করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করলে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হতে পারে জাহাঙ্গীরকে। সেটিও বৈঠকের আলোচনায় উঠে এসেছে। এ ছাড়া জাহাঙ্গীর আলমকে ডেকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কিছু বলা হবে না বলেও জানায় বৈঠক সূত্র। 
 
বৈঠকে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা টিমের প্রধান সমন্বয়ক ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী, সমন্বয়ক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, সমন্বয়ক টিমের উপদেষ্টা ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক উপস্থিত ছিলেন। এ বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সিমিন হোসেন রিমি, সাংগঠনিক সম্পাদক এস. এম কামাল হোসেন প্রমুখ।
 
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের সমন্বয়ক টিমের প্রধান মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন, আওয়ামী লীগ জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনের আগে এই নির্বাচন দেশবাসীর জন্য, আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ হওয়ার জন্য সবার ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যারা কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন সময়ের আলোকে বলেন, জাহাঙ্গীর আলম আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু তার মনোনয়নপত্র ঋণখেলাপির দায়ে বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। এরপর থেকেই তিনি সরকার ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একের পর এক নানা ধরনের কথা বলে যাচ্ছেন। তার কথায় বিএনপি- জামায়াতের ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে হচ্ছে। তাই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ফেরার পরই সিদ্ধান্ত হবে তাকে চূড়ান্ত বহিষ্কারের বিষয়ে।
 
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান পরিষ্কার। তিনি যে কথাবার্তা বলেছেন, তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার পর তিনি আওয়ামী লীগ ও সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের কথাবার্তা বলছেন। তাই আওয়ামী লীগ নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেই তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। নেত্রী দেশে ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আপাতত এটুকুই বলতে পারি। 
 
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মনোনয়ন বাতিল হওয়া জাহাঙ্গীর আলম তার অবস্থান থেকে যদি সরে না দাঁড়ায়, নৌকার পক্ষে কাজ না করে, তা হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফেরার পর স্থায়ী বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হবে। তিনি যে কথাবার্তা বলেছেন আল্টিমেটলি তিনি তো বহিষ্কার হওয়ারই কথা। 
 
তিনি বলেন, জাহাঙ্গীর আলম মনোনয়ন না পেয়ে কথাবার্তা বলেছেন উল্টাপাল্টা। তিনি বলেছেন, আমাকে গুম করা হতে পারে। আমার পায়ে শিকল পরানো হতে পারে। তার কণ্ঠে বিএনপির সুর শোনা যায়। জামায়াত-বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়নে তিনি এখন মাঠে আছেন। তিনি যদি ঘুরে না দাঁড়ান, যদি নৌকার পক্ষে সমর্থন না করেন, তা হলে বুঝতে হবে তিনি জামায়াত-বিএনপির ষড়যন্ত্রের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। 
 
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও নিজ জেলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে নিয়ে গাজীপুর সিটির তৎকালীন মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিতর্কিত বক্তব্যের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এর জেরে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় তাকে।
 
২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর গণভবনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ১৭(৬) এবং ৪৭(২) ধারা মোতাবেক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের কাছে সাধারণ ক্ষমা প্রার্থনা করেন। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থি কর্মকাণ্ড ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার অঙ্গীকার করেন তিনি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে আওয়ামী লীগ।
 
একই ঘটনায় জাহাঙ্গীর আলম মেয়র পদ থেকেও সাময়িক বরখাস্ত হন, সেই আদেশ এখনও প্রত্যাহার হয়নি। এবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকার টিকেট পেয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান। তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠন হওয়ার পর প্রথম নির্বাচনে (২০১৩ সাল) আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আলোচনায় আসেন জাহাঙ্গীর আলম। তখন নির্বাচনে জয়লাভ করেন বিএনপি (প্রয়াত) নেতা এম এ মান্নান।