Image description

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পশ্চিম রায়ের কান্দি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রুবিনা আক্তার হত্যা মামলার ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচারের কোনো অগ্রগতি হয়নি। চার্জশিটভুক্ত সকল আসামী মুক্ত বা পলাতক থাকায় নিহতের পরিবার এখনো ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রভাবশালী আসামীদের কারণে বিচার প্রক্রিয়া মন্থর হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

২০১৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর দুপুরে বিদ্যালয়ের কাগজপত্র ফটোকপির জন্য বাড়ি থেকে বের হন শিক্ষিকা রুবিনা আক্তার (৩৪)। কিন্তু তিনি আর বাড়ি ফিরে আসেননি। পরদিন তার ভাই সামসুল হক মুন্সি জাজিরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে বাড়ির পাশের বাঁশবাগান থেকে ওড়না দিয়ে বাঁধা অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

ঘটনার পর নিহতের ভাই অজ্ঞাত আসামী করে জাজিরা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে রুবিনার ভগ্নীপতি ও তৎকালীন উপজেলা যুবলীগ নেতা কামাল মাদবর ওরফে ‘তমি কামাল’সহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। তবে কিছুদিন পরই আসামীরা জামিনে মুক্তি পান।

২০১৯ সালের মার্চে পুলিশ তমি কামাল, মেহেদী হাসান, রাসেল মাদবর, সজিব মাদবর ও রাকিব শাহ’র বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে। কিন্তু প্রধান আসামী তমি কামাল চার্জশিটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট রিট খারিজ করে শরীয়তপুরের সেশন জজকে দুই মাসের মধ্যে চার্জশিট বহাল বা পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেয়। তবে তমি কামাল পুনরায় স্থগিতাদেশ চেয়ে আপিল করায় মামলাটি বর্তমানে হাইকোর্টে ঝুলে আছে।

নিহতের ভাই সামসুল হক মুন্সি বলেন, “আমার বোনের খুনিদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব। আসামীরা আমাকে মামলা থেকে সরে যেতে হুমকি দেয়, কিন্তু আমি ভয় পাই না। আমি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”

বাদী পক্ষের আইনজীবী ফায়জুর রহমান মনির বলেন, “বিবাদী পক্ষের রিট খারিজ হলেও নতুন আপিলের কারণে মামলা আটকে আছে। এতে বিচার প্রক্রিয়া থমকে গেছে।”

সহকর্মী শিক্ষক রিয়াজুল ইসলাম বলেন, “এমন চাঞ্চল্যকর হত্যার বিচার দ্রুত হওয়া উচিত ছিল। ৭ বছরেও বিচার না হওয়ায় হতাশা বাড়ছে।”

নারী ও শিশু নির্যাতন বিরোধী সংগঠন ‘নারী নির্যাতন দমন চাঁদনী মঞ্চ’-এর আহ্বায়ক জামাল মাদবর বলেন, “২০১৫ সালে ছাত্রী চাঁদনী হত্যার বিচার হয়নি, আসামীরা খালাস পেয়েছে। রুবিনা হত্যার বিচারও ঝুলে আছে। নিরপেক্ষ ও দ্রুত বিচার না হওয়ায় এমন ঘটনা বারবার ঘটছে।”

শিক্ষক রুবিনা হত্যার ৭ বছর পূর্ণ হলেও মামলার অগ্রগতি না থাকায় পরিবার ও স্থানীয়রা হতাশ। প্রভাবশালী আসামীদের কারণে বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী দ্রুত ও নিরপেক্ষ বিচারের দাবি জানিয়েছেন।