Image description

নড়াইলের লোহাগড়া পৌরসভার চতুর্থ শ্রেণীর চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী ওসমান গনির বিরুদ্ধে দায়িত্বে গাফিলতি, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, টিসিবি পণ্যে অনিয়ম ও পৌর সম্পদের অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এসব অপকর্মে অতিষ্ঠ হয়ে পৌরসভার স্থায়ী কর্মচারীরা পৌর প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে তার অপসারণ দাবি করেছেন।

অভিযোগের বিস্তারিত

স্থায়ী কর্মচারীদের লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ওসমান গনি পৌরসভায় যোগদানের পর থেকে উন্নয়নমূলক কাজে অনীহা প্রকাশ করছেন এবং দায়িত্ব পালনে চরম গাফিলতি করছেন। তিনি অফিসের গোপনীয়তা রক্ষায় ব্যর্থ হওয়ায় পৌরসভার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, যা তৃতীয় শ্রেণীর এই পৌরসভার জন্য ‘বিপজ্জনক’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগে আরও বলা হয়, তিনি নিয়মিত অফিসে উপস্থিত থাকেন না। প্রতিদিন সকালে অফিসে স্বাক্ষর করে নিজের ব্যক্তিগত কাজে চলে যান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওসমান গনি পৌর ভবনের নিচতলায় ব্যক্তিগতভাবে একটি অফিস খুলে বসেছেন। সেখানে তিনি কথিত টেন্ডারবাজি, টিসিবি ডিলারশিপ এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। সহকর্মীদের অভিযোগ, তিনি পৌর কর্মকর্তাদের হুমকি-ধামকি দিয়ে নিজের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করতে বাধ্য করেন। সহযোগিতা না করলে তিনি ভুয়া তথ্য তৈরি করে কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রচার করান বলেও অভিযোগ রয়েছে।

পৌর সম্পদের অপব্যবহার

ওসমান গনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চুক্তিভিত্তিক চাকরিতে যোগ দিয়ে প্রথমে পৌরসভার রোলার ড্রাইভার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি পৌরসভার দুটি ট্রাক ও তিনটি রোলার নিয়মিত ভাড়া দিলেও এর কোনো হিসাব পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেননি। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করতেন। এছাড়া, তিনি পৌরসভার আসবাবপত্র—চেয়ার, টেবিল ইত্যাদি—জোরপূর্বক নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত অফিস সাজিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

টিসিবি পণ্যে অনিয়ম

টিসিবি পণ্য বিক্রিতে ওসমান গনির বিরুদ্ধে ওজনে কারচুপি, অস্বচ্ছ বণ্টন এবং অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব কর্মকাণ্ড শহরের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তন

সম্প্রতি ওসমান গনি রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তন করে জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার এই রাজনৈতিক প্রভাব পৌরসভার কার্যক্রমে আরও বাধা সৃষ্টি করছে বলে কর্মচারীরা জানিয়েছেন।

পৌর প্রশাসকের বক্তব্য

এ বিষয়ে লোহাগড়া পৌর প্রশাসক মিঠুন মৈত্র বলেন, “এমন অনিয়মের তথ্য আমিও শুনেছি। অফিসের অন্যান্য স্টাফরা ওসমান গনির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

স্থানীয়দের প্রশ্ন

স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলেছেন, একজন চতুর্থ শ্রেণীর চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী কীভাবে পৌর ভবনের ভেতরে ব্যক্তিগত অফিস খুলে এ ধরনের কার্যক্রম চালাতে পারেন? তার এসব অনিয়মের বিষয়ে দ্রুত তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

ওসমান গনির সন্ধান মেলেনি

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ওসমান গনিকে পৌরসভা কার্যালয়ে খোঁজা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

লোহাগড়া পৌরসভার এই ঘটনা স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সবাই এখন অপেক্ষায় আছেন পৌর প্রশাসনের তদন্তের ফলাফল ও পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য।